দেশে বেকার যুবকদের মধ্যে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বেশি সময় ব্যয় করেছে, তারাই বেকারত্বের শীর্ষে। এসব শিক্ষিত যুবকরা প্রতিষ্ঠানিক পড়াশুনার সঙ্গে সমন্বয় করে চাকরি খুঁজতে গিয়ে দীর্ঘসময় বেকারত্বে থাকেন।
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ এর “বাংলাদেশের যুব বেকারত্ব” নিয়ে এক ওয়েবিনারে দেওয়া মূল্য বক্তব্যে গবেষণা সংস্থা– সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব তথ্য তুলে ধরেন। গত শনিবার (৮ জুন) অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে ফাহমিদা খাতুন বলেন, “শিক্ষার সাথে বেকারত্বের অদ্ভূত একটা মিল রয়েছে। এটা ভালো দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। শিক্ষা বাড়লেই যে তারা চাকরি পাচ্ছে- আমরা তা দেখছি না।”
গত শনিবার (৮ জুন) অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে ফাহমিদা খাতুন বলেন, “শিক্ষার সাথে বেকারত্বের অদ্ভূত একটা মিল রয়েছে। এটা ভালো দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। শিক্ষা বাড়লেই যে তারা চাকরি পাচ্ছে আমরা তা দেখছি না।”
তিনি বলেন, যারা প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ১১ বছর কিংবা তারচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন– সেসব যুবক শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি। নারীদের মধ্যে যারা প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ৯ বছরের বেশি কাটিয়েছেন, তাদের মধ্যেও বেকারত্বের হার উচ্চ।
“অন্যদিকে যারা প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ৭ বছরের কম সময় কাটিয়েছেন তাদের মধ্যে বেকারত্ব খুবই কম। তারা যেকোন ধরনের কর্মসংস্থানে ঢুকে পড়েছেন।”
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর তথ্য বলছে দেশে বেকারত্বের হার হচ্ছে ৩.৬ শতাংশ। এরমধ্যে যুব বেকারত্ব প্রায় ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া, নিট হার (কোনো প্রকার শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানে নিয়োজিত নেই) হচ্ছে ৩০ শতাংশ। এটা ভয়াবহ একটা সংখ্যা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেকারত্ব হার নির্ধারণের বিদ্যমান পদ্ধতির সমালোচনায় ফাহমিদা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতিমালা অনুযায়ী যারা সপ্তাহে কম হলেও একঘণ্টা কাজ করেন– তাঁদের কর্মে নিয়োজিত বলা হয়। “সে অনুযায়ী, বিআইডিএস দেশে বেকারত্বের হার চার শতাংশের নিচে দেখাচ্ছে। আসলে এটা আমাদের দেশের প্রকৃত বেকারত্বের চিত্র নয়। কারণ আমাদের দেশে মানুষ এক ঘণ্টার জন্য (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে) কাউকে কাজে নেন না” ব্যাখ্যা করেন ফাহমিদা।
“অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার কারণে আমাদের দেশের সামস্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নড়বড় হয়ে গেছে। তারপরও আমাদের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। কিন্তু আমাদের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদনের) তুলনায় খুবই কম, বা প্রায় ২৩.৫ শতাংশ। আমরা গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখছি কিন্তু সেই তুলনায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ক্রমান্বয়ে কৃষিখাতে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে” বলছিলেন তিনি।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, শিল্পখাতে মোট কর্মসংস্থানের ৯০ শতাংশ এবং সেবাখাতে প্রায় ৬৮ শতাংশ অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্মরত। “এসব অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান দিয়ে উপযুক্ত কর্মসংস্থান সম্ভব নয়।”
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ফাহিম মাশরুর বলেন, আমাদের দেশে যুবক বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। আমাদের অর্থনীতি যেভাবে খারাপ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে– তাতে বেকারত্ব আরও বাড়তে পারে। “আমাদের দেশের চাকরির বাজারে কোভিডের পর থেকে কোন পরিবর্তন আসেনি। অথচ আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের দিকে যাচ্ছি।”
তিনি উল্লেখ করেন, “আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক পরিমাণে স্কিল গ্যাপ (দক্ষতার ঘাটতি) রয়েছে। আমরা অনেক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তারা পড়াশুনা শেষ করে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায়। অথচ তাদের সে ধরণের ভাষাগত দক্ষতা নেই, কমিউনিকেশনের দক্ষতাও খুবই কম।”
ফাহিম মাশরুর তাঁর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, গ্রামের লোকজন আগে সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকত। এখন শহরের ছাত্ররাও বেসরকারি খাতের চেয়ে– সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে খুবই আগ্রহী। “কোন কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য ১ হাজার লোকের আবেদন পড়ে। অথচ যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীতে একজন লোক খুঁজে নেওয়া-ও খুবই কঠিন। কারণ প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করলেও চাকরির জন্য দক্ষতা, প্রশিক্ষণ তারা (চাকুরি-প্রত্যাশীরা) অর্জন করতে পারেনি।’
“সরকার দক্ষতা উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দের বড় একটা অংশ খরচ করছে। আমি বলব এভাবে প্রতিষ্ঠান-কেন্দ্রিক বরাদ্দ না দিয়ে শিল্প-কেন্দ্রিক বরাদ্দ দেওয়া হলে অর্থাৎ – বেসরকারি খাতের মাধ্যমে দেয়া হলে, এর মাধ্যমে ব্যাপক ফলফল আসতো, ” যোগ করেন তিনি।