আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পরিবশের জন্য
ক্ষতিকর দ্রুত বর্ধনশীল ইউক্যালিপটাস গাছ রোপন বন্ধ হয়নি। খরাপ্রবন উত্তারাঞ্চলে পানির স্তর
নেমে যাওয়া নিয়ে উদ্ধেগের মধ্যে অধিক লাভের আশায় অনেকেই এই গাছটি রোপণ করছেন।
কিন্তু এই গাছ রোপণের ফলে কৃষি জমির উপর প্রভাব পড়ছে। এতে পরিবেশের বির্পযয়েরও
আশাঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
বৈজ্ঞানিক ভাষায় এই গাছকে ডাকা হয় ইউক্যালিপটাস ওবলিকোয়া হিসেবে। সারা বিশে^
ইউক্যালিপটাসের প্রায় ৭০০ প্রজাতি আছে। এই গাছ থেকে কিনো,তেল ও ট্যানিন পাওয়া
যায়। বেশ কিছু ইউক্যালিপটাস এর প্রজাতিতে গাম নিঃসরণের কারণে এদেরকে গাম ট্রি
(মঁস ঃৎবব) হিসেবে অবিহিত করা হয়। এই গাছটিতে অধিক পরিমান তেল থাকায় এটি বেশ
দাহ্য এবং খোদ এর আবাসভূমি অস্ট্রেলিয়াতে একে অগ্নি সৃষ্টিকারী হিসেবে আখ্যা দেওয়া
হয়।
দেশের উত্তরাঞ্চলে এই গাছের ক্ষতিকর দিকগুলো না জেনে অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় অনেকেই এই
গাছ লাগান। এমনকি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, বসতবাড়ি,অফিস-আদালত,রাস্তার দুধারে, ফসলের
মাঠে পর্যন্ত এ গাছ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রাণালয় এক প্রজ্ঞাপনে দেশে ইউক্যাীলপটাস
গাছের চারা উৎপাদন নিষিদ্ধ করেন। এই গাছ একটি কাঠের গাছ যা প্রকৃতিগত অষ্ট্রেলিয়ায়
পাওয়া যায়। কেনিয়া,ব্রাজিল,দক্ষিন আফ্রিকায় এই গাছ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কৃষি ও পরিবেশবিদরা বলছে, গাছটির মুল থাকে ১৫ মিটার গভীরে। এই গাছ আশেপাশের
প্রায় ১০ ফুট এলাকার ও ভ‚গর্ভের প্রায় ৫০ ফুট নিচের পানি শোষণ করে আকাশে উঠিয়ে দেয়।
এই গাছ রাতদিন ২৪ ঘন্টাই পানি শোষণ করে আকাশে উঠিয়ে দেয়। ফলে মাটিতে পানিশুণ্যতা
দেখা দেয়। এই গাছের পানি ও খনিজ লবন ছাড়াও এই গাছ অতিরিক্ত পানি শুষে ডালপালায় জমা
রাখে। ফলে যে জায়গায় গাছটি লাগানো হয়, সে স্থানটি হয়ে পড়ে পানিশূন্যে। কমে যায়
উর্বরতা শক্তি। এতে পানির স্তর নিচে নামাসহ অন্য প্রজাতির গাছের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে
পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে। এসব ক্ষতিকর দিক জানার পর উপজেলার নানা স্থানে এই গাছ লাগানোর
হিড়িক পড়ে গেছে।
উপজেলার জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই গাছের পাতায় এক
ধরণের অ্যন্টিসেপটিক থাকায় এর নিচে ছোট গাছ বাড়তে পারে না। মারা যায় পোকা-মাকড়।
এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ।
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, এই গাছ মাটি থেকে
প্রচুর পরিমানে পানি শোষণ করে। প্রমাণ সাইজের ইউক্যালিপটাস গাছের শিকড় মাটির
প্রায় ৪০ ফুট গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। কোথাও এই গাছ বেশি সংখ্যক লাগালে কয়েক
বছরের মধ্যেই সেখানকার মাটি শুস্ক হয়ে পড়ে। যেকোনে ভুগর্ভস্থ জলের স্তরও নেমে যায়।