আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন
ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে এখন মহিলারা কোরবানির গরু-ছাগল পালন
করছে। এর ফলে এবারের কোরবানির ঈদের গরুর চাহিদা অনেকটা তাঁরাই
পূরুণ করছে। এর ফলে এই ব্যবসা করে অনেকে মহিলারা বাড়তি আয় করছে।
তাছাড়া হাট থেকে গরু কেনার চেয়ে গ্রামের মহিলা খামারিদের কাছ
থেকে গরু,ছাগল কিনতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন অনেকে ক্রেতারা।
সরজমিনে জানা গেছে, এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখন মহিলাদের
তেমন কাজ নেই। সংসারে বাড়তি আয় বাড়ানোর জন্য তাই মহিলারা
কোরবানির অনেক আগে থেকেই ছোট জাতীয় গরু কিনে লালন-পালন করতে
থাকে। গরুর পালনের পাশাপাশি তাঁরা ছাগল, ভেড়াও চাষ করছে। আট-দশ মাস
লালন-পালন করার পর কোরবানির সময়ে তাঁরা এই পশুগুলি বিক্রি করে দেয়। শহরের
অনেক ক্রেতা এখন গ্রামের এইসব গরু-ছাগল কেনার জন্য গ্রামে গ্রামে
আসছে। এইসব গরু-ছাগল সাধারনত প্রাকৃতিক খাদ্য দ্বারা লালন-পালন
করে থকে মহিলা খামারিরা। ফলে তাঁদের পালিত পশুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে শহরের
ক্রেতারা ভিড় করছে।
সান্তাহার সদর ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রামের বিধবা মহিলা কুলসুম বেওয়া
এ বছর এনজিও থেকে টাকা উত্তোলন করে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি গরু
লালন-পালন করে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছে। খরচ বাদ দিয়ে আয় হয়েছে
৭০ হাজার টাকার মতো। তিনি জানালেন, অনেক কষ্ট করে গরু দুটি লালন-
পালন করছি। গরুদের জন্য মশারি কিনে দিছি। ঘাস,লতা, পাতা খাইয়ে বড়
করছি। আয় ভালই হয়েছে।
উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে কুরবানির গরু কিনতে
এসেছেন নওগাঁ জেলা থেকে ব্যবসায়ী আনসার আলী। তিনি জানান,
হাটে গিয়ে কুরবানির গরু কেনা কঠিন কাজ। তাই গ্রামের মহিলাদের
খামার থেকে এই বৎসর কুরবানির গরু কিনবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উপজেলার আদমদীঘি ইউনিয়নের সুদিন গ্রামের পাঁচ মহিলা মিলে একটি
গরুর খামারের ব্যবসা করছে। দুটি পুরুষ শ্রমিক রেখেছে। এ বছর ৮টি
গরু কোরবানির হাটে বিক্রি করেছে। মেটি গরু আছে খামারিতে ২২
টি। একটিও মোটা জাতা করেনি বলে জানালেন তাঁদের একজন সবিতা
রানী। তিনি জানালেন স্বামীদের পাশাপাশি তাঁরাও সংসারের খরচে সাহায্য
করতে চায়। তাই তাঁরা এ কাজে নেমেছে। কিন্তু গো-খাদ্র্যের অসম্ভব দামের
কারনে আমরা গরু পালনে হিমসিম খাচ্ছি। ২০ আটি খড়ের দাম বর্তমানে
১২৫ টাকা।
উপজেলার গোড়গ্রামের মহিলা খামারি নিগার সুলতানা বিজলী ৮টি গরু
লালন পালন করছেন। কয়েকটি গরু এবার ঈদে বিক্রি করেছেন। প্রতিদিন তার
খামার থেকে ১০৭ লিটার দুধ বিক্রি হয়। সে পশু ব্যবসা করে বর্তমানে
স্বাবলম্বী।
উপজেলা পশু ও প্রানী সম্মদ কর্মকর্তা ডাঃ আমিরুল ইসলাম জানালেন, অত্র
উপজেলায় মোট ২০৮টি গরুর খামার আছে। এই গো-খামারের ৪০ ভাগই
মহিলা দ্বারা পরিচালিত। তবে বর্তমানে গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক দামের
কারনে তাঁরা কিছুটা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। তবে এটা সাময়িক।