২০২৩ সালের ২৬তম সার্জেন্ট ও ৪০তম পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিয়োগ পরীক্ষায় পুলিশ ভেরিফিকেশনে দলীয় বিবেচনায় বাদ দেয়া চাকরি প্রত্যাশীরা মানববন্ধন করেছেন। গতকাল রোববার পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে এ মানববন্ধন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পুলিশে নিয়োগ প্রত্যাশীদের পুনঃবিবেচনার দাবিতে তারা এই মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধন থেকে চাকরি প্রত্যাশীরা বলেন, এরইমধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে বিগত সরকারের আমলে পুলিশ প্রশাসনে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট কাজ করতো। এ সিন্ডিকেট পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তারা বলেন, প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দলপ্রীতি দেখানো হয়েছে। এইভাবে একদলের লোকজনকে পুলিশ প্রশাসনের নিয়োগ দেয়ার কারণে তারা অন্য সব দলের লোকজনের ওপর নির্যাতন করেছে। তারা আরও বলেন, ২৬তম সার্জেন্ট ও ৪০তম এসআই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় বাদ দেয়া হয়েছে। এই চার হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আমরা প্রায় ৫০০ জন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়েছি। যাদেরকে ভিন্ন মতাদর্শের কারণে এবং টাকা দিতে না পারার কারণে চাকরি দেওয়া হয়নি। তাই আমরা সবাই এক হয়েছি। প্রশাসন যেন দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করে। আমরা ৫০০ জনের কমিটি গঠন করেছি। একটাই দাবি পুনরায় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হোক।
আন্দোলনকারী চাকরি প্রত্যাশীরা জানান, তারা গত দুই মাস ধরে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করে আসছেন। তারা সরকারের ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন উপর মহল থেকে আশ্বাস পেয়েছেন। সে আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা পুনরায় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন।
আন্দোলনকারীরা আরও জানান, পুলিশ বাহিনীতে অনেক এসআই ও সার্জেন্ট পদ খালি রয়েছে। তাই কোনো এক উপর মহল থেকে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে তারা যেন আন্দোলন চালিয়ে যায়, তাহলে এই বিষয়ে উপর মহলের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। আর সেই আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। তবে এই উপর মহল কারা সেই বিষয়টি পরিষ্কার করে বলিনি শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনরত চাকরি প্রত্যাশীরা সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে এখনই কোনোসময় বেঁধে দিতে চান না। তারা চান দ্রুত যেন তাদের দাবি মেনে নিয়ে সরকার ও পুলিশ প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তবে দাবি যদি মানা না হয় তাহলে তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
মানববন্ধনে চাকরিপ্রত্যাশীরা আরও বলেন, বিগত সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বস্তা ভরে টাকা নিয়েছেন পুলিশ নিয়োগের। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দলীয়করণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা ভিন্ন মতের ছিল তাদের কাউকে পুলিশের চাকরি দেওয়া হয়নি। চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হতো। যারা প্রত্যয়নপত্র নিতে পারেনি তাদের চাকরি দেওয়া হয়নি। আমরা চাই বর্তমান সরকার যেন যেসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন তাদের প্রতি সুবিচার করে।
এ বিষয়ে এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. আবু সাইদ বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছি। আমি ৪০তম এসআই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। এসআই নিয়োগ পরীক্ষায় অনেকগুলো ধাপে পার হতে হয়। আমি রাজশাহীতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তিনদিন শারীরিক পরীক্ষা দিয়েছি। সেখানে যোগ্য হওয়ার পর লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হই। লিখিত পরীক্ষার পর আমাদের কম্পিউটার টেস্ট নেওয়া হয়। কম্পিউটার টেস্টের আগে প্রত্যেকের রাজনৈতিক মতাদর্শ জানার জন্য একটি ভেরিফিকেশন হয়। যারা ভিন্ন মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের রাজনৈতিক ভেরিফিকেশনের পর বাদ দেওয়া হয়। যারা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান ও ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকেই এই ভেরিফিকেশনে চাকরির জন্য সুপারিশ করা হয়। আমরা অন্তর্বতী সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি পুনরায় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের যেন দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হোক।
চাকরিপ্রত্যাশী আবু সাইদ আরও বলেন, আমাকে মৌখিক পরীক্ষায় বাদ দেওয়ার কারণ হলো আমার পরিবার বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। আমার বাবা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সে কারণে ভেরিফিকেশনে আমাকে নেগেটিভ দেওয়া হয়। পরে আমার এক আত্মীয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার বাবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা থেকে আগত চাকরিপ্রত্যাশী রাইসুল আমিন হৃদয় বলেন, আমি বরগুনার সরকারি কলেজ থেকে অনার্স, মাস্টার্স করেছি। ৪০তম এসআই নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় আমাকে মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এছাড়া আমার বাবা শ্রমিকদলের নেতা বলে ভেরিফিকেশন নেগেটিভ দেওয়া হয়। এলাকার স্থানীয় একজন যুবলীগ নেতা থানায় গিয়ে বলেছে যেন আমাকে চাকরি না দেওয়া হয়, আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান।