রংপুর প্রতিনিধিঃ- ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অক্সফোর্ড খেত, উত্তরের বাতিঘর ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের ১০৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে কলেজ প্রশাসন দিনব্যাপী আয়োজন করে নানান কর্মসূচী। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা, কেক কাটা, আলোচনা সভা ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানমালার প্রথম পর্ব শুরু হয় সকাল নয়টায়। কলেজের জিএল মাঠে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এরপর এক বিশাল শোভাযাত্রা বের করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এতে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে অনুষ্ঠান স্হলে এসে শেষ হয়। কারমাইকেল কারমাইকেল ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। মাথায় ক্যাপ পড়ে নাচে গানে মেতে থাকতে দেখা যায় সবাইকে। অনেককেই দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়া বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে খোশ গল্পে মেতে থাকতেও দেখা যায়।
এসময় একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতি বছর এই দিনটির (১০ নভেম্বর) জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। এইদিন খুবই আনন্দ উপভোগ করি আমরা। তবে তারা আক্ষেপ করে বলেন, ক্যাম্পাস আর আগের মতো নেই। প্রবেশ করেই মনটা খারাপ হয়ে যায় কারণ, ভেতরের রাস্তা ও বিল্ডিংগুলোর যে অবস্থা তা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। একসময়কার ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের আজ এই করুন দশা! ঝাড় জঙ্গলে ভরে গেছে ক্যাম্পাসের অধিকাংশ এলাকা। তারা ক্যাম্পাসকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখতে চান। তাদের দাবী, দ্রুত যেন কলেজের ভেতরের রাস্তাগুলো সংস্কার, বন্ধ হল গুলো চালু এবং সেই সাথে ভবনগুলো যাতে কালার করার ব্যবস্হা করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষার মান যেন আগের অবস্থানে ফিরে যায়।
অতিথিগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটির নানাদিক থেকে তার সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা। তবে বিগত সরকারের আমলে বৈষম্যের শিকার কলেজটিকে ঢেলে সাজানোর জন্য কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন তাঁরা। শিক্ষার মান এবং শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যাপারেও নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। সমস্যাগুলোর যাতে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্হা করা হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার আহবান জানানো হয় অনুষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের দাবীর সাথে একমত পোষণ করে বক্তারা বলেন, ক্যাম্পাসকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢেলে সাজানো হবে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ যাতে সুন্দর হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেবেন তাঁরা।
উদ্বোধনী পর্ব ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক প্রফেসর এ বি এম রেজাউল করীম। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ড. একিউএম শফিউল আজম, কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উপাধ্যক্ষ ড. রেহেনা খাতুন, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর দিলীপ কুমার রায় ও কারমাইকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রকিবুস সুলতান মানিক প্রমূখ।
সমাপনী পর্ব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় দুপুর ২ টার পরপরই। এতে সভাপতিত্ব করেন কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। এ পর্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীসহ রংপুরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কারমাইকেল কলেজের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পর্যায়ক্রমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। সবমিলিয়ে একটি মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানের আয়োজন সবার নজর কারে বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে আসা অনেকেই।