খারাপ স্বপ্ন দেখার পর আমরা অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ি। এ অবস্থায় করণীয় কী―তা অজানা অনেকের।
হযরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, বিশ্বনবী (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো ভালো স্বপ্ন দেখলে অবশ্যই তা মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। অতএব, সে যেন এ ব্যাপারে আল্লাহর প্রশংসা করে। আর তা কাউকে বলে। আর যদি সে এর বিপরীত তথা খারাপ স্বপ্ন দেখে, তাহলে সেটি অবশ্যই শয়তানের পক্ষ থেকে। অতএব, সে যেন উহার অনিষ্ট থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করে। আর সেই স্বপ্ন কাউকে না বলে। কেননা, এ জাতীয় স্বপ্ন কোনো ক্ষতি করতে পারবে না তার (বুখারি ৬৯৮৫, ৭০৪৫)।
কোনো ভালো স্বপ্ন দেখলে সেই স্বপ্ন সম্পর্কে শুধু প্রিয়জনকেই বলবে। আর খারাপ স্বপ্ন দেখলে শয়তান ও তার ক্ষতি থেকে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাইবে। তিনবার থুতু ফেলবে। আর কাউকে বলবে না।
হযরত আবু ক্বাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি অনেক সময় খারাপ স্বপ্ন দেখে রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তাম। অতঃপর আমি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ভালো স্বপ্ন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং, তোমাদের মধ্যে কেউ ভালো স্বপ্ন দেখলে সে যেন শুধু তার প্রিয় মানুষকে বলে। আর খারাপ স্বপ্ন দেখলে যেন তার ও শয়তানের অনিষ্ট থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। তিনবার থুতু ফেলে। আর স্বপ্ন সম্পর্কে কাউকে না বলে। কেননা, এ ধরনের স্বপ্ন কোনো ক্ষতি করতে পারবে না তার (বুখারি ৭০৪৪)।
স্বপ্ন তিন প্রকার। প্রথম, ভালো ও সৎ স্বপ্ন। এ ধরনের স্বপ্ন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ হিসেবে এবং নবুওয়তের ৪৬ ভাগের এক ভাগ। এ সংক্রান্ত সহিহ হাদিস রয়েছে দ্বিতীয়, অপছন্দীয় খারাপ স্বপ্ন। এ ধরনের স্বপ্ন শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে দেখানো হয়ে থাকে। যেন এই স্বপ্নের মাধ্যমে আদম সন্তান চিন্তিত হয় এবং তাকে নিয়ে শয়তান ঘুমের মধ্যে খেলা করতে পারে। তৃতীয়, জাগ্রত অবস্থায় মানুষ যে ব্যাপারে নিজে নিজে কথা বলে বা চিন্তা করে, সেটি ঘুমের মধ্যে দেখা। এ জাতীয় স্বপ্ন সাধারণ মানুষ তার জাগ্রত অবস্থার কর্মকাণ্ডকেই দেখে থাকে।
ভালো বা খারাপ স্বপ্ন দেখলে স্বপ্নদ্রষ্টার করণীয় সম্পর্কে সিহাহ সিত্তাসহ অন্যসব কিতাবে সহিহ সনদে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিস পাওয়া যায়। হযরত জাবির থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করে আল্লাহ তাআলার কাছে শয়তান থেকে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং পার্শ্ব পরিবর্তন করে ঘুমাও (সুনানে আবু দাউদ-৫০২২)।এখানে স্পষ্ট বর্ণনা করা যে, খারাপ স্বপ্ন দেখলে প্রথমে বাম দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে। এরপর সেই খারাপ স্বপ্ন থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে এবং যে পাশ হয়ে ঘুমিয়ে ছিল সেই পাশ পরিবর্তন করবে। এতে আশা করা যায় তার ওই খারাপ স্বপ্নের জন্য ক্ষতি হবে না কোনো।
খারাপ স্বপ্ন দেখলে করণীয়: খারাপ স্বপ্ন দেখলে সেই স্বপ্নের অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। প্রথমে তিনবার ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’ পড়তে হবে। এতে ওই স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না (মুসলিম ২২৬২)।
এছাড়া হাদিসে একটি দোয়া বর্ণিত আছে। দোয়াটি হচ্ছে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিন শাররি হাজিহির রুইয়া।’। এর বাংলা অর্থ হচ্ছে- হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এই ভয়ংকর স্বপ্নের অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
শরীরের বাম দিক করে তিনবার (বাতাসে আর্দ্র ধরনের) থুথু নিক্ষেপ করবে (মুসলিম ২২৬১)। আর যে পাশ হয়ে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখা হয়, ওই পাশ পরিবর্তন করে অন্যদিক হয়ে ঘুমাবে (মুসলিম ২২৬২)। অবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিতস্বরূপ করা হয়ে থাকে এমন। এছাড়া খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলবে না। নিজেও কখনো ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবে না (বুখারি ৬৫৮৩)। নামাজ পড়বে (মুসলিম ২২৬৩)।