বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) থেকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) সময়ে ৬৭০ কোটি (৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে বেসরকারি কিছু ব্যাংক থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি কেনা হয়। খবর বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, সরকারের জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে এতদিন ডলার বিক্রি করে এলেও এখন তার উল্টো পদক্ষেপে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণের জন্য ডলার কিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বাড়ানো হচ্ছে। যদিও বাজারে এখনো ডলার সংকট রয়েই গেছে। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এখন ডলার বিক্রি করার মতো পরিস্থিতিতে নেই। এরপরও কিছু ব্যাংক উচ্চমূল্যে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনে তা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দামে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের ডলার কিনছে। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম হচ্ছে ১১০ টাকা। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক ডলার বিক্রিতে ১১০ টাকার বেশি দাম নিচ্ছে। সরকারি- বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে নিজেদের আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলার কিনছে ১১২ টাকায়। আবার কিছু ব্যাংক ১২৩ টাকা দামেও প্রবাসী আয় কেনার কথা শোনা যায়। যদিও উচ্চমূল্যে কেনা এই ডলার তারা কম মূল্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে।
গত ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার, যা আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। তবে ২৮ ডিসেম্বর রিজার্ভ বেড়ে ২৭ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে, যা বিপিএম ৬ অনুযায়ী ২১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের ঋণের কিস্তি ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে বাজেট সহায়তা এবং বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থছাড় হওয়ার ফলে রিজার্ভ বেড়েছে। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বর সময়ের এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) বিল জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে হতে যাচ্ছে। এতে রিজার্ভ ফের কমবে।
সূত্র জানায়, করোনার সময় দেশে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় আসে। তখন ডলারের বাজার ও দাম স্থিতিশীল রাখতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছেড়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছর রিজার্ভ থেকে সব মিলিয়ে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছর (২০২২-২৩) বিক্রি করে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এই ধারা অব্যাহত আছে চলতি অর্থবছরও। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ৬৭০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে গত ১৮ মাসে রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগে বেসরকারি আমদানিকারকদের ডলার দিলেও এখন দিচ্ছে না। ফলে ডলারের জন্য ব্যাংকগুলোর শেষ আশ্রয়স্থল বলে কিছু নেই। ডলার সংকটের কারণে আমদানির ঋণপত্র খোলা কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে ছোট-বড় সব আমদানিকারকই ঋণপত্র খুলতে সমস্যায় পড়ছেন।