জ্বালানি তেলের দাম কমার সুফল জনগণ সহজে পাচ্ছেন না। দাম কমার সঙ্গে ভোক্তার সুবিধা নিশ্চিত করার কোনো গাইডলাইন এখনো তৈরি হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে গত শুক্রবার (৮ মার্চ) থেকে দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।
জ্বালানির দাম কমলে বা বাড়লে কৃষি, শিল্প, গার্হস্থ্য বা পরিবহনে নতুন দাম কীভাবে কার্যকর হবে, এমন কোনো পরিকল্পনা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
ডিজেল ও কেরোসিনের বিক্রয় মূল্য লিটারে ৭৫ পয়সা কমিয়ে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা করা হয়েছে। প্রতি লিটার অকটেনের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমিয়ে ১২৬ টাকা ও পেট্রল ১২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ১২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। এটি সাধারণত সেচে ও পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। ফলে দাম কমার প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে খুব বেশি পড়বে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বাস্তবায়ন কাঠামো শক্তিশালী নয়। এখানে তেলের দাম কমলে পরিবহন ভাড়া কমে না। কিন্তু দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বেড়ে যায়। এ অবস্থায় তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ববাজারে দাম কম থাকার সময় দেশে বেশি দামে জ্বালানি বিক্রির বাড়তি মুনাফা আলাদা তহবিলে রাখতে হবে। আবার বিশ্ববাজারে দাম বাড়তি থাকলে অভ্যন্তরীণ বাজারে সেই তহবিল থেকে ভর্তুকি দিতে হবে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘দাম কমানোর লাভ পাবেন মালিকরা। কোনো খাতেই লাভের গুড় জনগণের কল্যাণে আসবে না।’ তিনি বলেন, ‘নামসর্বস্ব দাম কমানো একধরনের অজুহাত। লুণ্ঠনমূলক নীতিতে কয়েক দশকে যেভাবে দাম বেড়েছে, কমানোর হার সে তুলনায় কিছুই না। সবচেয়ে সংকটের বিষয় হচ্ছে, জ্বালানি খাতে যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে, জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় না নিলে তার সমাধান সম্ভব না। যৌক্তিক মূল্যহার নির্ধারণ করতে যে গণশুনানি ছিল, সেটিও বিধি করে সরকার নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। ফলে জনগণের বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন যে মূল্য নির্ধারিত হয়েছে তা বাজারমূল্য নয়। এই দাম কমার প্রভাব বিদ্যুৎ, উৎপাদনশীল খাত বা কৃষিতে পড়বে না। তাহলে লাভটা হয়েছে কার? লাভটা সামগ্রিক অর্থে হবে ওই মালিক গোষ্ঠীর।’
শামসুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘পেট্রল তো আমদানি করতে হয় না। এটি আমাদের বাই প্রোডাক্ট। এই পণ্যটির দাম নিয়েও জনগণকে প্রতারিত করা হচ্ছে।’
সম্প্রতি এক আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম জানিয়েছেন, ‘সরকার নামমাত্র দাম কমিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমান তেলের যা দাম সে অনুসারে দাম আরও কমা উচিত ছিল। কী পদ্ধতিতে হিসাব করেছে তা স্পষ্ট নয়। বিপিসির আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা নিয়ে আগে থেকেই প্রশ্ন রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তেলের দাম কমেছে, কিন্তু পরিবহন ভাড়া না কমলে এর সুফল তো জনগণ পাবেন না।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, বিশ্ববাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়ে বাংলাদেশের ভোক্তাদের ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে না। কারণ জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে বাস বা ট্রাকের ভাড়া কমবে না। তেলের দাম বাড়ানো হলে পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে। অর্থাৎ দাম ওঠানামার কার্যক্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। ক্যাবের সুপারিশ ছিল জ্বালানি তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে।