ঈদুল আজহার দিন কাছে আসতেই ঊর্ধ্বমুখি হতে শুরু করেছে দেশের বৃহত্তম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মসলার বাজার। ১৫শ’ টাকা কেজির এলাচ সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রির প্রমাণ পেয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।
এ বি ট্রেডার্স নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কেজিতে তিন হাজার টাকা বাড়িয়ে এলাচ বিক্রি করছিলেন। খুচরা পর্যায়ে যা বিক্রি হচ্ছে আরও বাড়তি দামে। আজ বুধবার (৫ জুন) সকালে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একটি টিম খাতুনগঞ্জে মসলার বাজারে অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার এক এজেন্টের কাছে ১৫০০ টাকা কেজির এলএমজি এলাচ স্লিপের মাধ্যমে ৪৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বাড়তি দামে বিক্রির মাধ্যমে মসলার বাজারে কারসাজিরও প্রমাণ পান তারা।
এ বি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী অমর কান্তি দাশ বলেন, ‘আমি মিথ্যা বলতে পছন্দ করি না। যারা তেল, চিনির ব্যবসায়ী আছেন; তাদের তেল, চিনি, গমের ব্যবসা চলছে না। এলএমজি এলাচ নিয়েই তারা খেলাটা চালাচ্ছে।’ এসময় বাড়তি দামে বিক্রির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সামান্য লোভের কারণে আজকে অপমানটা লাগছে। আমার লোভ ঢুকে গেছে। আমি রেডি মাল যদি ৩২০০ থেকে ৩৩০০ করে যদি বিক্রি করি; একদিনের মধ্যে মাল শেষ হয়ে যাবে।
ভারতে যদি নিম্নতম রেট থাকে ২৪০০, আমাদের এখানে যাবে না কেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এক বছরে এলাচি বিক্রি হয় নাই এমন অনেক রেকর্ড আছে। ২০২২ সালে লোকসান দিয়ে এলাচ বিক্রি করেছি। এক টনে দশ লাখ টাকা লস।’ সেই টাকা তুলে আনতেই বাড়তি দামে এলাচ বিক্রি করেছেন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু তো লাভ করার জন্য করতেই হয়। না হলে ব্যবসায়ী টিকবে না।
আমরা না টিকলে রাজস্ব বরবাদ হয়ে যাবে। ওপেন কথাবার্তা। এবার সারাদেশে এলাচ ও গোলমরিচ শর্ট। মার্কেটে যদি কম থাকে এখানে দাম বাড়ার বিষয়টা কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন লস হয় আমাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। ট্যাক্স ফাইল ক্লিন রাখতে হয়। দশ বছরে ৫৪ কোটি টাকা ট্যাক্স দিই।’
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘প্রথমে এসে আমরা এ বি ট্রেডার্সের বিক্রি ভাউচার দেখলাম। গত বছরের ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ একদিনেই তিন দরে ১৮৪০, ১৮৫০ ও ১৮৬০ টাকায় বিক্রি করেছেন এলএমজি এলাচ। এক মাস পরে এসে দেখলাম একই প্রোডাক্ট ২২০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
আবার বর্তমানে এসে দেখলাম, উনি ৪৪৮০ কিংবা ৪৫৫০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেছেন একই পণ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাকিতে বিক্রি করেছেন বলে প্রথমে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তার নাকি টাকা আটকে আছে। বাকিতে হলেও দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে মার্কেট অস্থিতিশীল তিনি করতে পারেন না। বাকিতে দিলেই যে দ্বিগুণ দামে তিনি বিক্রি করতে পারবেন, আইনে এমন কোথাও নেই। যাদের কাছে পণ্য বিক্রি করেছেন, অনেকের কাছে তিনি স্লিপে বিক্রি করেছেন।
৪৫৫০ টাকার পণ্য বিক্রির উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলেই তখন মার্কেটে ছাড়বেন।’ বাড়তি দামে বিক্রির জন্য আমদানিকারক ও এজেন্টরা বাজার অস্থিতিশীল করছে বলে অভিযোগ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের।
এসময় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ বি ট্রেডার্সকে ১ লাখ ও খুচরা দুই প্রতিষ্ঠানকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।