আসলে আমাদের করার কিছু নেই। দাম বাড়লেও কিনতে হবে, না বাড়লেও কিনতে হবে। উপায় নেই, বাঁচতে তো হবে। আমরা জিম্মি হয়ে গেছি, করার কিছু নেই। তবে সরকার চাইলে এ বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে এবং নিয়মিত তদারকি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’ শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর দুয়ারীপাড়া কাঁচাবাজারে এসে এভাবেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন সুমন সরকার নামে এক ক্রেতা।
বাজারে উচ্চ দামে নাকাল সব-শ্রেণির ক্রেতারা, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তরাও এখন অস্বস্তিতে। অনেকে এক কেজির পরিবর্তে আধা কেজি বা পোয়া কেজি কিনছেন। নিম্ন আয়ের অনেকে সবজি কিনছে পিস হিসেবে।
সকালে দুয়ারীপাড়া বাজারে আসেন সিনথিয়া নামের এক ক্রেতা। তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের অনেক দাম। গাজরের মান তেমন ভাল না তাও ১২০ টাকা কেজি। সেকারণে দুই পিস কিনেছি
বাজার করতে এসেছেন সার্ভিস হোল্ডার রবি মিয়া। তিনি বলেন, ‘দাম অতিরিক্ত, গাজর ১৮০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা কেজি। বাজার করতে এসে আগে যেটা এক কেজি নিতাম সেটা এখন বাধ্য হয়ে আধা কেজি নিচ্ছি। দুই সপ্তাহ আগে যে দাম ছিল তার দেড়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে দাম। আমরা উচ্চ মধ্যবিত্ত, আমাদেরই কষ্ট হচ্ছে। এই দাম বাড়তে বাড়তে থামবে কোথায়, ঠিক নেই। এ যেন অসমাপ্ত গল্পের মত শেষ নেই।’
বাজারে সর্বনিম্ন সবজির দাম ৬০ টাকা। পেঁপে ও ঢেঁড়স ৬০ টাকা কেজি, কুমরা ও জালি কুমরাও ৬০ টাকা পিস, কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা, বটবটি, বেগুন ও কাঁকরোল গত সপ্তাহ থেকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ টাকা কেজি, টমেটো ১৫০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০ টাকা, গাজর ১৫০ থেকে এখন ১৮০ টাকা, লাউ আকারভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, কচুরমুখি ১০০ টাকা, উস্তা ১২০ টাকা। সবজির সঙ্গে মাংসের দামও যথারীতি বেশি। গরুর মাংসের কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, ব্রয়লার ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা, লেয়ার ৩৬০ টাকা কেজি। গরিবের প্রোটিন হিসেবে ডিমের চাহিদা খুবই বেশি। সেই ডিমের দামও হালি ৫০ টাকা।
ওয়াশিংয়ের কাজ করেন মোহাম্মদ হাবিব। সকালে ৫০০ টাকা নিয়ে এসেছেন মাছের বাজারে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম শুনে তার মাথা ঘুরছে।
হাবিব বলেন, ‘বাজারে যা টাকা নিয়ে এসেছি, মাছ কিনব নাকি তরকারি কিনব কোনো কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমরা তো নিম্ন আয়ের মানুষ। জিনিসপত্রের দাম শুনে মাথা ঘুরতেছে। একদিন বাজার করলে পরের দিন আবার কি করব টেনশন করতে হয়। আমাদের মত গরিব মানুষ কি করে খাবে, আমাদের দিকে তো কেউ তাকায় না, আমরা কি কষ্টে চলি, কি খাই, কোথায় থাকি এই খবর কেউ রাখে না। জিনিসের দাম বাড়তেছে, আমরা যারা গরিব মানুষ কিনে খাওয়ার ক্ষমতা নেই।’
মাছও উচ্চদামেই স্থিতিশীল। রুই মাছ আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, শিং ৪০০, পাঙাশ ২২০ টাকা, ছোট সাইজের সিলভার কাপও ১৪০ টাকা, আর ঝাটকা আকারের ইলিশের দামও ৮০০ টাকা কেজি।
নিত্যপণ্যের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আবারও ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। রসুন ২২০ টাকা, আদা ২৮০ টাকা, আলু ৬৫ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ইন্ডিয়ান ১১৫ টাকা।
সবজি বিক্রেতা মাসুম বলেন, ‘মানুষ এখন একপোয়া বা আধা কেজি হিসেবেই বেশি কিনে। এক কেজি খুবই কম বিক্রি হয়। এভাবে কম কেনার কারণে আমাদের বেচাকেনা আগের মতো হয় না। জিনিসপত্র পচে নষ্ট হচ্ছে। এভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে আর মানুষ যদি কেনার পরিমাণ কমিয়ে দেয় তাহলে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।