শক্তিশালী সৌরঝড় পৃথিবীতে আঘাত হানল পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী সৌরঝড়। দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সৌর ঝড় এটি। যা শুক্রবার পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে। তাসমানিয়া থেকে ব্রিটেন পর্যন্ত আকাশে দর্শনীয় মহাকাশীয় আলোর প্রদর্শনী শুরু করেছে এবং সপ্তাহের শেষেও এটি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে উপগ্রহ এবং পাওয়ার গ্রিডেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকের মধ্যে পৃথিবীতে আঘাত হানা এটি সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরঝড়। এর কারণে স্যাটেলাইট ও বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্পেশ ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার জানিয়েছে, সূর্য যখন প্রচুর পরিমাণ শক্তি উগরে দেয় বা নির্গত করে ঠিক সেই সময় এই রকম ভূচৌম্বকীয় ঝড়ের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী রাত ১০ টার দিকে কোরোনাল মাস ইনজেকশন পৃথিবীতে আঘাত হানে। সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল থেকে চুম্বকীয় প্লাজমার বড় অগ্ন্যুৎপাত এটি। পরে এটি জিওম্যাগনেটিক স্টর্মে পরিণত হয়।
এদিকে এই সৌরঝড়ের কারণে উত্তর ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়াতে অরোরা বা মেরুজ্যোতি দেখা গেছে। ফটোগ্রাফার শন ও’ রিওর্ডান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, আজ ভোর ৪ টেয় তাসমানিয়ায় একেবারে বাইবেলে বর্ণিত আকাশ দেখা গেছে। আমি আজ চলে যাচ্ছি। এই সুযোগ হাতছাড়া হলো না।
কর্তৃপক্ষ স্যাটেলাইট অপারেটর, এয়ারলাইন্স এবং পাওয়ার গ্রিডকে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য ব্যাঘাতের জন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রিপোর্ট অনুযায়ী, সূর্য তার ১১ বছরের দীর্ঘ সৌরচক্র অতিক্রম করছে। এই কারণে, করোনাল ম্যাস ইজেকশন এবং সোলার ফ্লেয়ার সূর্যের মধ্যে ঘটছে, যা ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলতে থাকবে। সেপ্টেম্বর ২০১৭-এর পর এখন পর্যন্ত সূর্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় সৌর শিখা দেখা গেছে।
সৌর ঝড়ের কারণে স্যাটেলাইটে শর্ট সার্কিট হয়। পাওয়ার গ্রিড ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব কারণে মহাকাশচারীদের জীবনও হুমকির মুখে পড়তে পারে। এদিকে পৃথিবীর ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ঘটিয়ে বিঘ্ন ঘটাতে পারে বিদ্যুৎ পরিষেবাসহ কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও।
উত্তর ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে অরোরার ছবি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়া আলোকিত হয়েছে।
ব্রিটেনের হার্টফোর্ডের একজন থিঙ্ক ঠ্যাঙ্কার ইয়ান ম্যানসফিল্ড জানিয়েছেন, আমরা বাচ্চাদের পেছনের বাগানে নর্দার্ন লাইট দেখার জন্য জাগিয়ে দিয়েছি। খালি চোখে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের সঙ্গে যুক্ত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ওঠানামা করে দীর্ঘ তারে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করে, যার ফলে ব্ল্যাকআউট হতে পারে। দীর্ঘ পাইপলাইনগুলোও বিদ্যুতায়িত হতে পারে, যা ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যাগুলোর দিকে পরিচালিত করে।
মহাকাশযানও উচ্চ মাত্রার বিকিরণের ঝুঁকিতে রয়েছে, যদিও বায়ুমণ্ডল এটিকে পৃথিবীতে পৌঁছাতে বাধা দেয়।
নাসার একটি নিবেদিত দল রয়েছে যা মহাকাশচারীর নিরাপত্তার দিকে নজর রাখছে এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা মহাকাশচারীদেরকে ফাঁড়ির মধ্যে এমন জায়গায় যেতে বলতে পারে যেগুলো আরও ভালোভাবে সুরক্ষিত।