মোস্তাফিজার রহমান জাহাঙ্গীর,কুড়িগ্রাম,প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে ধরলার পানি। বুধবার সকালে উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী, বড়ভিটা ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে ঢুকেছে বন্যার পানি। দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে নদীর তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে । এদিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ পুনর্বাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অব্যাহত বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নিমনাঞ্চলের অনেকের ঘরবাড়িতে বানের পানি প্রবেশ করেছে। তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা, পাট ও সবজি খেত। যাতায়াতের রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ভোগান্তি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
উপজেলার বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। অনেকের বসতবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। অনেকের আমনের বীজতলা পাট ও সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। বানের পানিতে ভেসে গেছে অনেকের পুকুরের মাছ। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ওই এলাকায় খাবার পানিরও সংকট দেখা দেবে বলেও জানান তারা।
উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন (ইউপি) আতাউর রহমান মিন্টু জানান, বড়ভিটা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী চারটি ওয়ার্ডে বন্যার ঢুকেছে। এতে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় আমনের বীজতলা, সবজি ও পাট খেত বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। মৎস্য চাষীদের পুকুরে মাছে ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পানি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা কবলিতদের সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ইউনিয়নে দেড় টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি দুপুর হতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে বন্যা কবলিতদের মাঝে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করছেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) চেয়ারম্যান হাসেন আলী ও শিমুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শরিফুল আলম সোহেল জানান, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধরলা উপছে ওই দুই ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেকের বসতবাড়ির আশপাশে বানের পানি এসেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো বসতবাড়িতে পানি ওঠার খবর তারা পাননি। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ওই দুই ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হবেন বলে জানান ওই দুই ইউপি চেয়ারম্যান।
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শেখ জানান, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধরলা উপছে ওই দুই ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।আমারে মনে হয় দুইটি ওয়ার্ডে ৩শর অধিক বাড়ি পানিবন্দি হয়ে আছে, অনেকের বসতবাড়ির আশপাশে বানের পানি এসেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো বসতবাড়িতে পানি ওঠার খবর তারা পাননি। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ওই দুই ইউনিয়নে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা ত্রাণ পুনর্বাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে উপজেলার নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ী,ফুলবাড়ী, বড়ভিটা ও ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিতদের সহায়তার জন্য ৮ মেট্রিক টন (জিআর) চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে শুকনা খাবার ক্রয় করে বরাদ্দকৃত চাল ও শুকনা খাবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গণের মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ শুরু করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।