শেরপুর, বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে চাঁদাবাজীর অভিযোগে আটক নামধারী ৩ সাংবাদিকসহ ৪ জনের নামে মামলা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আরো ২-৩ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে শেরপুর উপজেলার শুবলি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানা ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। পরে আজ তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন, কথিত সাংবাদিক বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে আব্দুল হালিম, বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকার রুস্তম আলী শেখ এর ছেলে মুক্তার শেখ, শেরপুর উপজেলার উত্তরসাহাপাড়া’র মৃত সিরাজ উদ্দিনের ছেলে রায়হান পারভেজ ও শেরপুরের ঘুটু বটতলা ঘোলাগাড়ি এলাকার মোঃ মাসুদ রানা।
এর আগে গতকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শুভলি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় কথিত ওই তিন সাংবাদিকসহ আলোকিত সকাল নামক পত্রিকার বগুড়া জেলা প্রতিনিধি মাসুদ পারভেজ শুভলি উচ্চ বিদ্যালয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তারা ওই স্কুলের পেছন থেকে ২ বছর পূর্বে কর্তন করা ইউক্যালিপটাস গাছ সম্পর্কে খোঁজ খবর এবং জেরা করতে থাকেন শিক্ষকদের। তখন শিক্ষকরা তদেরকে জানান, স্কুলের কেউ গাছ কাটেনি। ওই গাছটি স্কুলের ছিল না। জমিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় ছিল। ওই জায়গার মালিক হাবিল নামক এক ব্যক্তি, তিনি নিজেই তার গাছ কেটে নিয়ে গেছেন।
এরপর তারা শিক্ষকদের কক্ষ থেকে বের হয়ে হাবিলের বাসায় গিয়ে হাবিলকে তার জমির দলিলপত্র দেখাতে বলেন। তখন হাবিল কাগজপত্র দেখাতে সময় চেয়ে তাদেরকে স্কুলে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন। পরে ওই ৪ জন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে যান। এরপর গত রবিবার প্রধান শিক্ষক স্কুলে কেন অনুপস্থিত ছিলেন এ সংক্রান্ত বিষয়ে তাকে জেরা করেন এবং তিনি ছুটির কোন দরখাস্ত দিয়েছিলেন কিনা সেটা জানতে চান এবং দরখাস্ত দেখতে চান।
এসময় প্রধান শিক্ষক তাদেরকে বলেন, তার এক আত্মীয় মারা যাওয়ায় তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে মৌখিক ছুটি নিয়েছেন। তখন তারা ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দিলে তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিউজ করার হুমকি দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্কুলটিতে ছূটে যান।
স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে কয়েকজন তাদেরকে চিন্তে পারেন, তারা গত রবিবারও শেরপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজী করে গেছেন। সোমবার তাদেরকে ওই দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে আরো কিছু টাকা চাঁদা দেওয়ার মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছিলো। সেই টাকা তাদের নিতে আসার কথা ছিলো। পরে গত রবিবারের চাঁদাবাজী এবং গতকাল সোমবারের চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় তারা সাংবাদিক পরিচয়ধারীদের গণধোলাই দিয়ে স্কুলেই আটকিয়ে রাখে। পরে শেরপুরের সাংবাদিক পরিচয় বহনকারী আবু বক্কর সিদ্দিক, মাসুদ, সেতু নামের তিন সাংবাদিক তাদেরকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে উত্তেজিত শিক্ষার্থী ও জনতা আবু বক্করকে গণধোলাই দেয়। এ সময় সেতু ও মাসুদ পালিয়ে পায়। পরে ওই তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করে।
আরও জানা গেছে, গতকাল ওই তিন কথিত সাংবাদিকসহ আবু বক্কর, সেতু, মাসুদ এবং লিটনের মোট ৭ জন শেরপুর উপজেলা শুবলি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৬৫০০ টাকা এবং হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১ হাজার টাকা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে চাঁদাবাজি করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা গতকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) তাদের শুবলি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে আরো ২০ হাজার টাকা এবং হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আরো ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে যায়।
এ বিষয়ে শুবলি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী জাহানারা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন। আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। আমাকে তারা গত রোববার ৬/৭ জন এসে ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি মানুষের কাছ থেকে টাকা ধার করে তাদেরকে ৫ হাজার টাকা দেই। এবং আরো ১৫ হাজার টাকা একদিন পরে দেবো বললে চলে যায়।
ওই কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মাসুদ রানা বলেন, গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে তারা ক্লিনিকে আসে। আমি ওই সময় ছিলাম না। নামাজে গিয়েছিলাম। পরে ক্লিনিকে আসলে তারা আমাকে জেরা করতে থাকে আমি ক্লিনিক বন্ধ করে কোথায় গিয়েছিলাম। আমি ঠিকমতো ক্লিনিকে আসিনা। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করবে বলে আমকে হুমকি দেয়। চাকরি খাবে সংক্রান্ত কথা বলে আমাকে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাদাদাবী করে। আমি তাদেরকে আমার কাছে থাকা ১৫০০ টাকা দিলে তারা ৫০০০ টাকা পরের দিন রেডি করে রাখতে বলে চলে যায়। সে মোতাবেক তারা গতকাল সোমবারও এসেছিল আমার কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য। কিন্তু তারা আগে ওই স্কুলে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়।
শুবলি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানা খাতুন বলেন, আমি গতকাল কেন স্কুলে অনুপস্থিত ছিলাম এবং ২ বছর পূর্বে স্কুলের পেছন থেকে কাটা গাছের বিষয়ে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলো। এক পর্যায়ে তারা আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদাদাবী করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শুবলি গ্রামের মোঃ নাসির হোসেন জানান, আমি গত ১৭ তারিখে ছাত্র আন্দোলনে ১৩৯ রাবার বুলেট খেয়েছি ভুয়া সাংবাদিকদের চাঁদাবাজির জন্য খাইনি, আমাদের শুবলি গ্রামের কোন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি চলবে না । এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এসে দুর্নীতি করলে তাকেও আমরা ছার দেবো না ।