সারিয়াকান্দি ও ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেল ৬টায় বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সারিয়াকান্দিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এদিন সকাল ৬টায় এ নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৩৭ মিটার। বিকেল ৬টায় পানির উচ্চতা হয় ১৬.৬৩ মিটার, অর্থাৎ ১২ ঘন্টায় পানি ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। এই দুই উপজেলায় যমুনা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার। পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গত বুধবার রাতে ধুনটে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে পানি ১৬.৫৭ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আমাদের সারিয়াকান্দি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৭৫টি গ্রামের ১১২ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ১১ হাজার ৯৭০টি পরিবারের ৪১ হাজার ৩৭০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফলে উপজেলার ৫৮টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৯০টি বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৫০টি কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় এ উপজেলার ৫৩০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র পাটগাছই আক্রান্ত হয়েছে ৪৩০ হেক্টর জমির। এতে উপজেলার ২ হাজার ৮৬০টি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার কারণে উপজেলার এক হাজার ৫০টি নলকূপ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উপজেলার ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়েছে। পানিবন্দী হওয়ায় উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষরা তাদের বসতভিটার উঁচু জায়গার মাচা পেতে বসবাস করছেন, কেউবা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলার বন্যায় আক্রান্ত এলাকাবাসী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা রান্না করতে না পারায় খাবার কষ্টে রয়েছেন এবং তাদের বসতভিটা ডুবে যাওয়ার কারণে তারা পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যায় ভুগছেন। এদিকে উপজেলার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়েছে, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণির কার্যক্রম অন্যত্র চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান বলেন, বন্যার জন্য এ উপজেলার মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। উপজেলার একটি মানুষও যাতে না খেয়ে থাকে তার জন্য সকল প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে, বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে এবং ৬টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আমাদের ধুনট প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় প্রবল স্রোতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে শহড়াবাড়ি বাঁধ (স্পার) ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই স্থানে সাড়ে তিন হাজার বালু ভর্তি জিও বস্তা ফেলা হয়েছে। আরও আড়াই হাজার জিও বস্তা ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে। এরআগে ১ জুলাই থেকে বাঁধটি রক্ষায় এই কাজ শুরু করা হয়। তবে পানি বৃদ্ধির ফলে প্রবলস্রোতের কারণে বাঁধের গোড়ালিতে বালুভর্তি জিও বস্তা ফেলার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে বাঁধের মাঝামাঝি স্থানে ধস দেখা দেয়। সংবাদ পেয়ে মজিবর রহমান মজনু এমপি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বাঁধ রক্ষার ব্যবস্থা করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় শহড়াবাড়ি স্পারটি (বাঁধ) নির্মাণের পর থেকে দফায় দফায় নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে। বর্তমানে বাঁধটির এক হাজার ২শ’ মিটার বাঁধের প্রায় এক হাজার মিটার অংশ টিকে আছে। বাঁধটি টিকে থাকার কারণে ভাটির দিকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। এদিকে বর্ষা মৌসুম এলেই শহড়াবাড়ি বাঁধটি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে বাঁধটি রক্ষায় আরও বালুভর্তি জিও বস্তার প্রয়োজন। পানি বেড়ে বুধবার সকালের দিকে যমুনা নদীর কূল উপচে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বপাশে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। বাঁধের অভ্যান্তরে প্রায় প্রতিটি বাড়ির চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। চরের বেশকিছু জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, পুরো বাঁধ এলাকা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আপাতত ভাঙনের কোন শঙ্কা নেই। বালু ভর্তি জিও বস্তা ফেলে ঝুঁকিপূর্ণ শহড়াবাড়ি বাঁধটি টিকে রাখার চেষ্টা চলমান রয়েছে।