মেডিকেল ভিসা নিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারতীয় দূতাবাসের নতুন শর্তের বেড়াজালে দেশটিতে আটকে পড়েছেন শতাধিক বাংলাদেশি। দেশে ফেরার জন্য ভারতীয় ইমিগ্রেশন ব্যুরো অফিসে আবেদন করলেও ধীরগতির কারণে দুই সপ্তাহ ধরে দেশে ফিরতে পারছেন না তারা। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন সাইদুর নীর সালিন। জটিল রোগে আক্রান্ত তার বাবা মোহাম্মদ শাহ আলম। স্বজনদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসায় গত মাসে বাবাকে নিয়ে ভারত যান সালিন। যাওয়ার আগে দূতাবাসের শর্ত অনুযায়ী কলকাতার একটি হাসপাতালের প্রত্যায়নপত্র দেখান। কিন্তু ভারতে ঢুকে জানতে পারেন হায়দরাবাদে আরো উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। পরে কলকাতা বাদ দিয়ে বাবাকে হায়দরাবাদে নিয়ে যান সালিন। সেখানে তার বাবাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অপারেশনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের অর্থ প্রয়োজন হওয়ায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।’
সালিন বলেন, ‘গত ২১ জুন ফেরার সময় ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে প্রশ্ন করে কলকাতায় না দেখিয়ে কেন হায়দ্রাবাদে ডাক্তার দেখিয়েছি। একপর্যায়ে আমাদের দেশে ফেরার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন ও ভুল স্বীকার করে অনলাইনে ইমিগ্রেশন ব্যুরোতে আবেদন করতে বলেন কর্মকর্তারা। বাধ্য হয়ে একটি আবাসিক হোটেলে উঠি এবং অনলাইনে আবেদন করি। কিন্তু আবেদনের দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইমিগ্রেশন থেকে অনুমতি না আসায় দেশে ফিরতে পারছি না। আমাদের হোটেলেই থাকতে হচ্ছে। এতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। কবে ফিরতে পারব তাও জানি না।’
সালিন ও তার বাবার মতো আরও অনেকেই মেডিকেল ভিসায় ভারতে গিয়ে দেশে ফেরার পথে এ সমস্যায় পড়ছেন। ভারতীয় দূতাবাসের খামখেয়ালিপনার কারণে এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, উন্নত চিকিৎসা সেবা, উচ্চশিক্ষা, ব্যবসার খোঁজখবর ও দর্শনীয় স্থান ঘুরতে প্রতিবছর বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহার করে ২০ থেকে ২২ লাখ পাসপোর্টধারী।
২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেছে ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৭ জন। আর গত অর্থবছরের ১১ মাসে এ বন্দর দিয়ে যাতায়াতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪৭। অর্থাৎ এক বছরে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ হাজার ৪০ জন। সূত্রমতে, এই খাত থেকে ভিসা ফি বাবদ বেনাপোল ইমিগ্রেশন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বছরে ১২০ কোটি টাকার বেশি আয় করে থাকে ভারতীয় দূতাবাস। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেনাপোল বন্দর হয়ে ভারতে নিয়ে খরচ করছে দেশের নাগরিকরা।
পাসপোর্টধারী অনেক যাত্রীর অভিযোগ, কাগজপত্র ঠিক থাকলেও মায়ের ভিসা দিলেও সঙ্গে থাকা বাচ্চার ভিসা অনেক সময় পাওয়া যায় না। পরের বার আবেদনের জন্য রাখা হয়। এ ছাড়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৬ মাসের ভিসা দিলেও অনেক সময় একবার ভ্রমণের সুযোগ মিলছে। এতে চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পূর্ণ হচ্ছে না। পরে আবার ভিসা করাতে বা দীর্ঘ সময় ভারতে থেকে চিকিৎসা শেষ করতে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
এ ছাড়া ৬ মাসের মাল্টিপল ট্যুরিস্ট ভিসায় মাসে দুইবারের বেশি পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভ্রমণ করা যায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায় বিজনেস ভিসায় বারবার গেলেও বিভিন্ন জবাব দিতে হয়। অথচ, ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা এ ধরনের কোনো শর্ত ছাড়াই অনায়াসে ব্যবসা, চাকরি বা স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে বাংলাদেশে আসেন।
উজ্জ্বল বিশ্বাস নামে এক ট্রাভেলস ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারতে যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও তারা সেবার মান বাড়ায়নি। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন ছাড়তে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক বৈঠকে অনেক অনুরোধ করলেও এখন পর্যন্ত তারা কথা রাখেনি।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘দ্রুত বেনাপোল বন্দর পার হওয়া গেলেও পেট্রাপোল বন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তি হয়। সেবার মান বারানর ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা সভায় আশ্বস্ত করলেও তারা সেটা মানছে না।