নিউজ ডেস্কঃ– হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে অভিশপ্ত শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান উপস্থিত হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়।’ -সহিহ মুসলিম : ১০৭৯
তাহলে প্রশ্ন জাগে, রমজান মাসে শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকলে মানুষ রমজানে কিভাবে পাপ করে? মানুষ মনে করে, রমজানে শয়তানকে বোধহয় শেকল-বাকল দিয়ে আক্ষরিক অর্থেই বেঁধে রাখা হয়। ফলে প্রশ্ন দেখা দেয়, এই সময়েও যে প্রচুর মানুষ পাপাচারে জড়িত হয়, তাদের মন্ত্রণা কে দেয়? শয়তানি কাজ তো সারা দুনিয়ায় চলছেই, সেগুলো তো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা শয়তানের শূন্যতায়। অনেককে এটা নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করতেও দেখা যায়।
ইবনে হাজার ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘রমজানে শয়তান বাঁধা থাকে’ অনেকের মতে এর অর্থ হলো- মুসলমানরা যেহেতু রমজান মাসে রোজা রাখে, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরে বেশি সময় কাটায়, তাই তাদের কুপ্রবৃত্তি দমিত থাকে, নিয়ন্ত্রণে থাকে, যে কারণে শয়তান তাদেরকে ধোঁকা দিতে পারে না। শয়তানকে আক্ষরিক অর্থে বেঁধে রাখা হয়, এমন নয়।’
এছাড়া এর বেশ কিছু জবাব হাদিসবিশারদরা দিয়েছেন। কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকার অর্থ আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থেই হতে পারে। রূপক অর্থে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রমজানে শয়তানের ধোঁকা-প্রবঞ্চনার হার কমে যায়, অন্যায় কাজ কম হয় এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকে। এ অর্থে উল্লিখিত হাদিসে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার বাস্তবতা আমরা সবাই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে থাকি। -ইকমালুল মুলিম : ৪/৬
তাই ‘শয়তানকে বেঁধে রাখা’র হাদিসটি বলার পর, বোধগম্য ব্যাখ্যাও বলে দেওয়া দরকার। আল্লামা আইনি (রহ.) বলেন, শয়তানকে ওই সব রোজাদার থেকে দূরে আবদ্ধ রাখা হয়, যারা রোজার আদব ও শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু যারা সেসবের ধার ধারে না, তাদের থেকে শয়তানকে আবদ্ধ না-ও রাখা হতে পারে। -উমদাতুল কারি : ১০/২৭০
রমজানের আগে কৃত পাপের প্রভাবে মানুষ পাপ করে থাকে। যেমন একটি লোহা দীর্ঘক্ষণ আগুনে রাখার পর তা থেকে বের করা হলেও বেশ কিছুক্ষণ তার প্রভাব বাকি থাকে, একইভাবে গাড়ির চাকা দীর্ঘ সময় চলার পর থামানো হলেও কিছুদূর পর্যন্ত চলতে থাকে; ঠিক তেমনি ১১ মাসের পাপের প্রভাবে রমজানেও কারো কারো কাছ থেকে পাপ হয়ে থাকে।
কোনো কোনো হাদিস ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, রমজানে সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না, অতিরিক্ত দুষ্ট শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই অন্য শয়তানদের প্ররোচনায় মানুষ পাপ করে। -ফাতহুল বারি : ৪/১১৪
মহান আল্লাহ কোরআনের সুরা নাসে বান্দাদের মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান উভয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শয়তান রয়েছে, যারা মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। রমজানে জিন শয়তানকে বন্দি রাখা হলেও মানুষরূপী শয়তানদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
কারো কারো মতে, রমজানে বন্দি থাকার কারণে শয়তানের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকলেও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকে না। তাই মানুষ পাপ করে। -শরহুন নববি আলা মুসলিম : ৭/১৮৭