ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফর ও আসন্ন চীন সফর নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে এই দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ধরন ব্যাখ্যা করেছেন।
শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে পাহাড়ি ফলমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের পার্টনারশিপ আছে উন্নয়নের। ভারত আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু, চীন আমাদের উন্নয়নের বন্ধু।’
কাদের বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের ফরেন পলিসি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। বঙ্গবন্ধুর এই পলিসি শেখ হাসিনার পলিসি। এই পলিসি আমরা ফলো করি। ভারত আমাদের একাত্তর সালের পরীক্ষিত বন্ধু। একাত্তর সালের রক্তের রাখী বন্ধনে আমাদের এই সম্পর্ক আবদ্ধ।’
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমার উন্নয়নের জন্য যেখানে আমি সুযোগ-সুবিধা পাব, কেন আমি সুবিধা নেব না? আমার তো সাহায্য দরকার। যেখানে সাহায্য দরকার সেখানে আমি সাহায্য কেন নেব না? এতে কারো কারো গা জ্বলে, কেউ কেউ অন্তর জ্বালায় জ্বলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল রেল হয়ে গেল, এই অন্তর জ্বালায় যারা মরে, তাদের এইসব প্রশ্নের জবাব দিতে চাইনা।’
চীনের সহায়তার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের চট্রগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল, এটা কে করে দিয়েছে? চীনারা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়ক এটার কাজও করেছে চায়না। গতকাল পদ্মা সেতুর যে সমাপনী অনুষ্ঠান হল, এই পদ্মা সেতুর মেইন ব্রিজ ও রিভার চেঞ্জিং দুটোই চায়নার কোম্পানির কাজ।’
প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিক্ষার ঝুলি’ নিয়ে চীন সফরে যাচ্ছেন বিএনপির বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আমরা যাই না। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে প্যারিস কোনসোর্টিয়ামে বারবার হাজির হতো বিএনপির অর্থমন্ত্রী। তাদের মুখে বড় বড় কথা শোভা পায়না।’
চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখায় সরকারের কিছু করার নেই বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে দুটি গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানির দিন থাকলেও তা মুলতবি রাখে আপিল বিভাগ।
সেই সঙ্গে হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়।
এর ফলে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের রায় আপাতত বহাল রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল সরকার।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হলে গত ৫ জুন চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাই কোর্ট কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।
কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আবারও গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।
কোটা আন্দোলন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা তো কোথাও এই কোটা রাখিনি। আমাদের ব্যবস্থা ছিল কোটামুক্ত। আদালতে কারা মামলা করেছে তা আদালতের রায়ে আছে। সেখানে আমাদের, সরকারের কী দোষ? সরকার তো এটা করেনি। সেখানে সরকারের কী করার আছে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, পরিবেশ, বন জলবায়ু ও পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর উশৈসিং, জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী, উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু।