লেবাননের সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে আর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে আরব বিশ্বের দেশগুলোর জোট আরব লিগ।
গত শনিবার আরব লিগের সহকারী মহাসচিব ও মিসরীয় কূটনীতিক হোসাম জাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সংসদীয় উপদলের নেতা মোহাম্মদ রাদের সঙ্গে বৈরুতে এক বৈঠকের পর এই ঘোষণা দেন।
এক দশকেরও বেশি সময়ের পর আরব লিগ ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যোগাযোগ হলো। সবশেষ ২০১৬ সালে হিজবুল্লাহর নেতা রাদ ও আরব লিগ সহকারী মহাসচিব জাকির বৈঠক হয়। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-আখবারকে তিনি জানান, হিজবুল্লাহর ওপর থেকে সন্ত্রাসী তকমা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরব লিগ। কারণ এই গোষ্ঠীটি বর্তমান ভূরাজনীতি ও লেবাননের ভবিষ্যতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে আরব বিশ্বের বাদ দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম এখনও নীরব রয়েছে।
আল -আখবার তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের পর আরব লিগের সহকারী মহাসচিব জাকির সাথে হিজবুল্লাহর নেতা রাদ প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন। ওই বছর সৌদি আরবের উদ্যোগে শিয়া মতাবলম্বী গোষ্ঠীটিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেয় আরব লিগ। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া ও আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য হিজবুল্লাহকে তখন দায়ী করা হয়। সিদ্ধান্তটি আরব লিগের রেজ্যুলেশনেও প্রতিফলিত হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগও ছিন্ন করা হয়।
বৈরুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সহকারী মহাসচিব হোসাম জাকি বলেন, আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল ঘেইতের পক্ষে লেবানন ও এর জনগণের প্রতি এই অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোর সংহতি প্রকাশের লক্ষ্যে তিনি বৈরুত সফর করছেন। দক্ষিণে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি কেবল লেবাননেই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে সংঘাত যদি ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেটি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিসরীয় এই কূটনীতিক জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ১৭০১ মেনে চলার জন্য সব পক্ষের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে; যা দক্ষিণ লেবাননে সংঘাত বন্ধ করবে।
গাজায় হামলার শুরু থেকেই প্রতিবাদ হিসেবে ইসরাইলি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোয় রকেট ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ। ইরান-সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে প্রতিরোধে লেবাননেও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবসহ সাতটি দেশ নিজ দেশের নাগরিকদের লেবানন ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া আরও পাঁচটি দেশ তাদের নাগরিকদের লেবানন ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। এ অবস্থায় ইরানের জাতিসংঘের মিশন হুমকি দেয়, যদি লেবাননে হামলা চলতে থাকে, তাহলে ইসরাইলকে ধ্বংসের যুদ্ধ শুরু হবে। ইরান সতর্ক করে বলেছে, লেবাননে হামলা হলে ইরানের সব প্রতিরোধ বাহিনী ও মিত্ররা ইসরাইলকে মোকাবিলা করবে। সূত্র : আল আখবার