1. dailybogratimes@gmail.com : dailybogratimes. :
হিমাগারের ১৫ টাকার আলু হয়ে যায় ৭০ টাকা » Daily Bogra Times
Logo শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
নাটোরে এসিল্যান্ডের অপসারণের দাবিতে অফিস ঘেরাও রাষ্ট্র পরিচালনা এনজিও পরিচালনা নয় : ভিপি নুর প্রকাশ পেলো ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার সূচি আ’লীগ ক্ষমতায় থেকে শুধু লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে : মাহমুদুর রহমান মান্না ধামইরহাটে সংবাদ কর্মীদের সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ভিশনের জেন্ডার ভিত্তি সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পাবনা ভাঙ্গুড়ায় রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম,খোয়া বহনকারী ট্রাক ভাঙচুর মহাদেবপুরে পুকুর থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার ধামইরহাটে আইন শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত  জয়পুরহাটে কৃষক সমাবেশ ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা সদস্যর সাথী ফ্যাশান শুভ উদ্বোধন  বাংলাদেশ বিরোধী ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে জয়পুরহাটে মানববন্ধন সুন্দরগঞ্জে মরহুম এমপি আব্দুল আজিজ স্বরনে ফলক উন্মোচন ও স্বরনসভা অনুষ্ঠিত পল্লী স্বাস্থ্য উন্নয়ন সংস্থার শীতবস্ত্র পেয়ে খুশি দুই শতাধিক অসহায় শিশু রাণীনগরে প্রণোদনার ১৬০কেজি বীজ জব্দ জরিমানা মান্দায় ৫৫০ টাকা কেজিতে গোমাংস বিক্রয়ের শুভ উদ্বোধন করলেন ইউএনও 

হিমাগারের ১৫ টাকার আলু হয়ে যায় ৭০ টাকা

জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ-
  • বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
হিমাগারের ১৫ টাকার আলু হয়ে যায় ৭০ টাকা
print news

জয়পুরহাটে ১৫ টাকার আলু হিমাগার-আড়তদারদের কারসাজিতে ৭০ টাকায় পৌঁছেছে। কৃষকরা যখন প্রথম আলু তুলে বিক্রি করেন, তখন ১ কেজি আলুর দাম থাকে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। কিন্তু বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে শুরু করে জুন মাস থেকেই, আর অক্টোবরের মধ্যে আলুর দাম ৬০ থেকে৭০ টাকায় গিয়ে পৌঁছায়

কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর এই সময়েই আলুর দাম বাড়ে। এর মূল কারণ হল–হিমাগার মালিক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের বাজার নিয়ন্ত্রণের কারসাজি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু মৌসুম শুরুর দিকে কম দামে বিক্রি করলেও, আলু মজুতকারী ব্যবসায়ীরা সেই আলু বাজারে বিক্রি করতে ধীর গতিতে চলেন, ফলে দাম বাড়তে থাকে। কৃষকদের অভিযোগ দাম বেড়ে যাওয়ার এই বিষয়টি কাকতালীয় নয়, বরং এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পিত কারসাজির ফল।

কৃষকের দুরবস্থাঃ
প্রতি বছর কৃষকরা মাঠ থেকে আলু তুলে আনার পর প্রথমে বাজারে দাম কম থাকে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যখন আলু বাজারে সরবরাহ কমতে থাকে, তখন দাম বাড়তে থাকে। এবং এভাবেই বাজারে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। কৃষকরা বলছেন, ‘আমরা যখন মাঠ থেকে আলু তুলি, তখন বেশ কম দামে বিক্রি করি। তারপর ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু মজুত করে রেখে দাম বাড়াতে থাকে।’

এ বছরের উৎপাদন থেকে কৃষকরা বেশিরভাগ আলু বিক্রি করেছেন, কিছু বীজ আলু বাদে। কিন্তু হিমাগারে সেই আলু মজুত করা হয়েছে, যা পরে ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বাজারে ছড়িয়ে দেয়— এভাবেই চলে দাম বৃদ্ধির খেলা।

বাজারে সিন্ডিকেটের কৃত্রিম সংকটঃ
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এ বছরেও জয়পুরহাটে আলুর উৎপাদন লক্ষ্য ছিল ৮ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন, কিন্তু বাস্তবে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন।’ এই উৎপাদনের ২৫ শতাংশ হিমাগারে মজুত রয়েছে। তারপরও বাজারে সংকট তৈরি হওয়ার কারণ হল—সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ। ব্যবসায়ীরা ধীর গতিতে আলু বিক্রি করেন, আর দাম বেড়ে যায় প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা।

জয়পুরহাটের খুচরা বাজারে গত বুধবার আলুর দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই ব্যবধানের কারণে অনেক ক্রেতা সমস্যায় পড়ছেন। আলু ব্যবসায়ী রোমজান আলী বলেন, ‘হিমাগার গেটেই আলু বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ানো হয়। গত সপ্তাহে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া এক বস্তা আলুর দাম আজ বেড়ে হয়ে গেছে ৩ হাজার ৩৫০ টাকায়।’

হিমাগারের ভেতরের ব্যবসাঃ
অথচ কৃষকদের কাছ থেকে সেই আলু সংগ্রহ করা হয়েছিল অনেক কম দামে— এক মণ গ্যানোলা জাতের আলু ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। কিন্তু হিমাগারে মজুত থাকার কারণে, দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কৃষকরা বলছেন, ‘যদি সরাসরি আলু মজুত করতে পারতাম, তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।’

এই বছর জয়পুরহাটে ১৯টি হিমাগারে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে এখন কিছু বীজ আলু ছাড়া, বাকি আলুগুলো ব্যবসায়ীদের হাতে। হিমাগার মালিকরা জানান, নভেম্বরের মধ্যে সব আলু বিক্রি করতে হবে, কারণ এই সময়ে আলুর সংরক্ষণ ব্যয় বাড়তে থাকে।

সরকারি হস্তক্ষেপ: ফলাফল শূন্যঃ
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বাজার মনিটরিং চলছে, কিন্তু হিমাগারের মালিকদের হাতে এত বেশি আলু মজুত রয়েছে যে বাজারে অস্থিতিশীলতা রোধ করা যাচ্ছে না।’ কৃষকরা আবার সরকারের কাছে দাবি করেছেন, ‘যদি আলু সংরক্ষণের সরকারি ব্যবস্থা থাকত, তাহলে বাজারের এই অস্থিরতা সহজেই মোকাবেলা করা যেত।’

কৃষক মোক্তাদির রহমান, যিনি ১০ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলেন, তিনি বলেন, ‘আমি শুরুতে এক কেজি আলু ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম, কিন্তু এখন সেই আলু ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই অস্থিরতা না থাকলে, কৃষকরা আরও ভালো মুনাফা পেতেন।’

ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট: বাজারের আসল নিয়ন্ত্রকঃ
আলু ব্যবসায়ী রোমজান আলী বলছেন, ‘এটা খুবই স্পষ্ট যে, হিমাগারের মালিকরা ও বড় ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে সংকট তৈরি করা হচ্ছে, ফলে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।’

এদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলছেন, ‘আমরা বাজার তদারকি করছি, তবে যেহেতু হিমাগারে যথেষ্ট পরিমাণ আলু মজুত রয়েছে, তার পরও দাম বৃদ্ধির দায় পুরোপুরি সিন্ডিকেটের ওপর বর্তায়।’

কৃষকের পাশে সরকার: কি করবেন?
কৃষকরা মনে করেন, সরকার যদি আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়, তাহলে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাবে এবং বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। তবে প্রশ্ন একটাই–এই পরিস্থিতি রোধ করতে সরকার কি যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারবে?

আলু উৎপাদনে জয়পুরহাটের খ্যাতি দীর্ঘ দিনের। তবে মধ্যসত্বভোগীদের কারসাজির কারণে সেই খ্যাতি এখন নষ্ট হওয়ার পথে। এই অবস্থায় আলু চাষে কৃষকদের মনোযোগ ধরে রাখতে এবং বাজারে দাম কমানোর জন্য নজরদারি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া, অন্য কোনো পথ নেই বলে মনে করছেন কৃষক ও ভোক্তারা।

AH/ Daily Bogra Times

আরো খবর
dbt
© All rights reserved by Daily Bogra Times  © 2023
Theme Customized BY LatestNews