হিলি (দিনাজপুর): ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ হয়ে আছে হিলি স্থলবন্দরের ফোরলেন সড়কের কাজ। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দরের সোয়া দুই কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। ২ বছর অতিবাহিত হলেও শেষ হয়নি পূর্ণাঙ্গ সড়কের কাজ। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকসহ দূরপাল্লার যানবাহন, অটোবাইক ও রিকশাচালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চলাচলকারীদের। রোদ হলে ধুলা আর বৃষ্টি হলে কাদায় অতিষ্ঠ চলাচলকারীরা।
এদিকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভুমি অধিগ্রহণ জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা।
কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, এটি হলো হিলি স্থলবন্দরের প্রধান সড়ক। সড়কটির বেহাল দশায় চলাচলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিলি বন্দর। যেখান থেকে সরকার প্রতি বছর ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। অথচ সেই রাস্তাটির বেহাল দশা। প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মধ্যে চলাচল করতে হয় এলাকাবাসীকে। দুর্ভোগে পড়েছেন বাইক, অটোবাইক, রিকশা, ভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহনে চলাচলকারীরা। নির্মাণাধীন রাস্তায় কোথাও কোথাও হেঁটে চলা দায়। তৈরি হয়েছে নানা গর্ত, কোথাও আবার উঁচু নিচ। এতে বন্দর ব্যবহারকারী ও পথচারীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও নাগরিক কমিটির সচিব লিয়াকত আলী বলেন, সম্প্রতি ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বরে থেকে শুরু হয় জিরো পয়েন্ট-থেকে পানামা পোটের্র গেট পর্যন্ত ৮০০ মিটার ফোরলেনের কাজ। শুরু হয় এক পাশে ঢালাইয়ের কাজ। কিন্তু পানামা পোর্ট থেকে সিপি পর্যন্ত তিন লাইনের কাজ হলেও এখনো পড়ে আছে জিরোপয়েন্ট থেকে সিপি এবং চারমাথা থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত সড়কটির কাজ। একদিকে ঢালাই আর আরেক দিকে হিয়ারিংবন্ড রাস্তা। ঢালাই না করে যখনই বর্ষার পানিতে রাস্তা তলিয়ে বা খানাখন্দে পরিণত হয় তখনই ভাঙাইট ফেলাই দেয় সেখানে। এই খানাখন্দের কারণে এতে রোগী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সব পেশার মানুষরা পড়ে যান বিড়ম্বনার মধ্যে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ভারত থেকে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আসে এই রাস্তা দিয়ে। রোদ হলে হয় ধুলাবালি আর বর্ষা হলে হয় কাদার সৃষ্টি। এই ধুলাবালির কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও হাঁপানি রোগীর সংখ্যা।
হাকিমপুর পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, রাস্তার এই বেহালদশার কারণে ব্যবসায়ীসহ পুরো হিলিবাসী অনেক কষ্টে রয়েছে। কাজ না হওয়ার কারণে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তবে ডিসি অফিসে বার বার করে বলা হয়েছে, যারা সরকারি জায়গায় স্থাপনা রেখেছে তাদের নোটিশ দিয়ে তা উচ্ছেদ করা হোক কিন্তু এখনো করা হয়নি।
দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য সিবলী সাদিক বলেন, রাস্তা করার জন্য যখন মাপজোখ করে নিয়ে যায় তখন কবরস্থান রাস্তার মধ্যে পড়ে যায়। কবরস্থানকে রক্ষা করার জন্য পুনরায় পূর্ব পাশে জায়গা নিয়ে টেন্ডার করা হয়। আর এই কারণে কাজটা বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের একটা ব্যাপার ছিল। তাও বর্তমান শেষের পর্যায়ে। তবে বিদ্যুতের খুঁটিগুুলো অপসারণ হলেই অতি দ্রুত রাস্তাটির কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আমান উল্লাহ আমান বলেন, সড়কের ভ‚মি অধিগ্রহণসহ দাপ্তরিক বেশকিছু কাজে জটিলতা থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। দ্রুত এ সমস্যা কাটিয়ে রাস্তার কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন তিনি। হিলি বন্দরের জিরো পয়েন্ট থেকে পানামা পোর্ট গেট পর্যন্ত ৮০০ মিটার সড়কের প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।