কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ ন্যাশনাল আইডি কার্ডে ভুলের কারণে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল জলিল (খোকা) এখন ৩৭ বছরের যুবক বলে ফুলবাড়ী সমাজ সেবা অধিদপ্তরে তার বয়স্ক ভাতার নাম কর্তন করায় অসহায় হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আর অশ্রু ভেজা চোখে ভাঙ্গা কন্ঠে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তার ন্যাশনাল আইডি কার্ডটি যেন সঠিক করে দেয়।
বলছিলাম, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক ছিটমহল দাসিয়ারছড়া মধ্য সমন্বয়টারী গ্রামের এ বৃদ্ধ আব্দুল জলিল খোকার কথা। হাতে আইডি কার্ড আর অশ্রু ভেজা দুচোখ কান্না জড়িত কন্ঠে যাকেই পাচ্ছে তাকেই বলছেন মোর আইডি কার্ডটা ঠিক করে দ্যাও বাহে, আইডি কার্ডটা ঠিক হলে মুই মোর বয়স্ক ভাতাটা ফিরি পানু হয়। আমরা দুইজন স্বামী স্ত্রী আমার এক শতক জমি ও নাই থাকি বড় বেটার বাড়িত। আইডি কার্ডটা ঠিক হলে বয়স্ক ভাতা করিনিয়া দুইজনে বাকি জীবনটা ভালো করি চলিবার পাইলোং হয়। আব্দুল জলিল খোকাকে সরাসরি দেখলে মনে হবে তারপর ৭০ পেরিয়ে গেছে চলাফেরা করতেও তার কষ্টকর হয়, শারীরিক অবস্থাও বেশি ভালোনা, একটু হাঁটলেই দম ফেরাতে হয়, মাঝে মাঝে নিজ স্ত্রীর তবে হাত রেখে চলাফেরা করতে হয়। আব্দুল জলিল খোকার দুই ছেলে থাকলেও কোনো ভাবে এখন বড় ছেলের বাড়িতে জীবনযাপন করছেন তারা।
এলাকাবাসী দুজন জানান, আব্দুল জলিল খোকার আইডি কার্ডে বয়স কম হওয়ায় তার যে বয়স্ক ভাতা ছিল সেটা কাটি দিছে, এখন তার প্রকৃত বয়স প্রায় ৬৫ পেরিয়ে গেছে, তার এক শতক জমি ও নেই কোনোভাবে বড় ছেলের বাড়িতে তার স্ত্রীকে নিয়ে জীবন যাপন করছে। এখন নতুন করে ভোট হচ্ছে যদি তার আইডি কার্ডটি সংশোধ দিলে সে আবার হয়তোবা তার বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা হতো আর সে স্ত্রীকে নিয়ে সুন্দরভাবে চলতে পারতো।
আবদুল জলিল জানান, মোর বয়স ৬৫ বছর পার হয়য়া গেছে মুই ঠিক মতন চলাফেরা করিবার পাংনা কিন্তু আইডি কার্ডে নাকি মোর বয়স ৩৬ থেকে ৩৭ বছর দিছে, সেই জন্যে বয়স্ক ভাতা থাকি মোর নাম বাদ দিছে,মুইএ্যালা মোর স্ত্রীকে নিয়ে বড় ছেলের বাড়ি থাকোং মোর কোনো জমা জমি নেই,তোমরা মোর আইডি কার্ডটা ঠিক করে দ্যাও বাহে, আইডি কার্ড টা ঠিক হলে মুই মোর বয়স্ক ভাতা পাইম, সেই টাকা দিয়ে আমরা দুই স্বামী স্ত্রী ভালোভাবে চলতে পারমো।
৬৫ বছরের আব্দুল জলিল খোকার স্ত্রী জানান, আমার বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ও কষ্টে আছি। যাকে দেখে তাকে আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য বলে আর কান্নায় ভেঙে পড়ে।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ার ছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, আব্দুল জলিলের ভোটার আইডিতে ভুলবশত বয়স ৩৬ থেকে ৩৭ হলেও বাস্তবে তার বয়স ৬৫ বছরেরও বেশি। তাই আমি বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারকে অনুরোধ করছি,আব্দুল জলিল খোকার সহ আরো কোন আইডি কার্ডের এরকম ভুল থাকলে দ্রুত আইডি কার্ড গুরো ঠিক করে দেয়ার জন্য, আব্দুল জলিল যাতে তার যে বয়স্ক ভাতা থেকে বাদ পড়েছে সেটা যেন পুনরায় ফিরিয়ে পান।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মাহবুবা রহমান জানান, ভোটার হওয়ার সময় তিনি ১৯৮৭ সালের একটি জন্ম নিবন্ধনের যে কার্ডটি দিয়ে ভোট করেছিলেন, সেটা সঠিক ছিলোনা। সেই কারণেই তার আইডি কার্ডে বয়স ৩৭ বছর হয়েছে। এখন আইডি কার্ডটি সংশোধনের জন্য জন্ম নিবন্ধন কার্ড সংশোধন করে আবেদন করলে বিষয়টি দেখবো।