আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ আজ নবান্নঃ আদমদীঘিতে নবান্ন উৎসব দেখা দিয়েছে ঘরে ঘরে । বাংলা মাসের আজ ১ অগ্রাহায়ন। আজ নবান্ন উৎসব। নবান্ন বাংলাদেশ ও ভারতের পাশ্চিমবঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ধানের
বা পিঠার উৎসব। সোনালী ধানের ক্ষেতে রৌদ্দছায়ায় লুকোচুরির খেলা।
নতুন ধানের ম ম গন্ধ। আঙিনা আর ঘরদৌড় ঝকঝকে করতে কিষানিবধুর
ব্যস্ততা। গোধুলীর হলদেটে আভায় নামে সন্ধা। উর্ধকাশে তখন জ্বলজ্বলে লুদ্ধক
তাঁরা। ¯িœগ্ধ আলোয় আকাশে চাঁদের হাসি। নতুন ধান কেটে ঘরে তোলার
আয়োজন প্রায় শেষ। আগাম আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। ঘরে ঘরে তাই
শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব।
বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতনী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গির আলম
বললেন, ’এবার ধান ভালো হয়েছে। দামও ভাল পাওয়া যাবে আশা করছি।’ পাশে
দাড়িয়ে থাকা আরেক কৃষক মোসলেম উদ্দীন বলেন, ’আবার ঝড় বৃষ্টি হবে
নাতো? আকাশ মনে হয় কালো হচ্ছে।’ প্রতিউত্তর দিল কৃষক বাসেত। বললো,
’এই বোকা এই সময় ঝড় বৃষ্টি হয় নাকি?’ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলি
এখন গ্রামের মানুষেরাও জানে।তারাও প্রস্ততি নিতে শিখেছে। তবে এবারের
আমন মাড়াই কাটাইয়ের সময়ে আকাশ ভালো থাকবে তা আবহাওয়া বিভাগ
জানিয়েছে।
কৃষিসম্প্রসারন অধিদফতর বলছে, এবারের আমনের ফসল খুব ভালো।এদিকে
দেশজুড়ে এবার নাবন্নের উৎসবের সময়টাতেই নির্বচনী আমেজে
নির্বাচনী উৎসবের ঢাক বেজে উঠেছে। সাধারন নির্বাচন মানেই পাঁচ
বছর অন্তর অন্তর মহোউৎসব। এই উৎসবে প্রায় সব বয়সের মানুষেরা যোগ
দেয়। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নির্বাচনী জ¦রে কাঁপতে
থাকে সাধারন মানুষ। এ ব্যাপরে নবান্ন উৎসব এমন সময়ে যখন একদিকে
নতুন ধানের ফিরনি পায়েশে নবান্নের উৎসব। আরেক দিকের শীতের পিঠা
পুলি খাওয়ার ধুম। গ্রামীন সংস্কৃতিতে মেয়ে জামাই ও নাতি নাতনিদের
ন্ধাসঢ়;ইওর যাওয়ার পালা। মেয়েদেরবাপের বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। তার মধ্যেই
প্রতিটি এলাকায় প্রার্থী ও সমর্থকদের ভোট চাই… এমন সুরের ধ্বনীতে
শীতও পালাই পালাই সুর তুলবে।
গ্রামের পথে পা বাড়ালেই এখন চোখে ভেসে আসে প্রতিটি ঘরেই যেন
উৎসবের আমেজ। কিষানবধু পানিতে মাটি ছেনে কাদার মতো করে
আঙিনা লেপে নিচ্ছে। গ্রামে এখন আর কুঁড়ে ঘড় চোখে পড়ে না। হয়
টিনের ঘড়, না হয়, না হয় হয় টিনের আধাপাকা ঘর। বাড়ির বাইরের উঠানে
ধানের আঁটি গোল করে সাজিয়ে তিন চারটি গরু দিয়ে খুঁচিয়ে ধান
মাড়াইয়ের দিনশেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন এই উপজেলার অনেক গ্রামে হারভেস্টিং
যন্ত্রে জমিতেই ধান কেটে মাড়াই করে বস্তায় ভরে বাড়ির উঠানে আনা হয়।
ধান কাটার জন্য ছোট হারভেন্টার এসেছে। যাদের যন্ত্র নেই তারা ভাড়ায়
নেয়া যন্ত্রে ধান কাটে। অনেক কৃষক ধানকে স¤œান দেখিয়ে আগের
মতো ধান কেটে দিন কয়েক জমিতে রেখে শুকায়। তারপর নিয়ে যায়
আঙিনায়। কোন কৃষক কাঠের ঢোলের মতো ঘূর্নিয়মান ড্রামে ধানে
আটি ধরে ধান ছাড়িয়ে নেয়।
নবান্নকে ঘিরে নানা অনুষ্টানের পালা শুরু জয়েছে গ্রামে। গাঁয়ের
বধুদের অনেকে নবান্নের দিনগুলিতে নেচে গেয়ে উদযাপন করবে। এ
যুগের তরুণ তরুণীরাও নানা আয়োজনে ব্যস্ত। বিশেষ করে নদী তীরের
গ্রামগুলোতে নবান্নের উৎসবের পালা শুরু হয়। নৌকা করে নদীর ভেতরে
গিয়ে। এই সময়টায় নদী অনেক শান্ত। শান্ত নদীর অল্প ঢেউয়ে নৌকার মধ্যে
বাদ্য বাজিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে। কেউ যায় চরের গ্রামে। যেখানে ভরা
চাঁদের আলোয় নিসর্গের আরেক ভ‚বন তৈরি হয়। এর মধ্যেই কেউ
সঙ্গীতানুষ্টানের আয়োজন করে।
নিসর্গের এমন ভুবনের মধ্যে নবান্ন উৎসবের আনন্দের ভুবন তৈরি হতে
যাচ্ছে।