মো. রবিউল ইসলাম (রবীন) আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার
আদমদীঘি উপজেলার ছাতীয়ানপুর ইউনিয়নের কৃষক অব্দুল কাদের(৫৫) দুই
বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। গোলায়ও তুলেছেন সে ধান । দুই
বিঘা জমিতে রোপন করেছেন আউশ ধান। শ্রমিক না পাওয়ায় একাই সে
আউশ ধান কাটছেন। যা স্থানীয় ভাষায় ’বর্ষালী ধান’ হিসাবে পরিচিত।
তিনি জানালেন, এই ধান কেটে আমরা এই জমিতেই চিনিআতব ধান
রোপন করবো। যে ধান ভাদ্র মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত রোপন করা যায়। আবার
এই ধান থেকে যে খড় পাব তা দিয়ে গরুর খাদ্যর অভাব পূরুন হবে।,
এই ধান লাগানোর যুক্তি তুলে ধরে কৃষক আব্দুল কাদের জানালেন, ’জমিতো
পড়েই থাকবে। কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে। আমনের ফলন কম। তাই আমাদের
দুই আবাদের উপর নির্ভর না করে আউশ ধান লাগাতে হবে। বাড়তি কিছু
আয় হবে। এটা আমাদের জন্য ’বোনাস ফসল’।’গত বছরর আউশ ধান ৮৫০
টাকা থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই ধান এবার বিক্রি হচ্ছে ১
হাজার ২০০ টাকায়।
নশরৎপুর ইউনিয়নের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, বোরো কাটার পর পরই
আউশ ধানের বীজ বপন করা হয়। প্রায় ১৫ দিনের মধ্যেই চারা তৈরি হয়ে
জমিতে রোপন করার উপযোগি হয়। এক বিঘা জমিতে এ ধান চাষে উৎপাদন
খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। ধান পাওয়া যায় ১৬-১৭ মন। ১১৮ দিনের মধ্যে ফলন
পাওয়া যায়। এই ধান রোপণে আমন আবাদের কোন সমস্যা হয় না। তাই
আমিও বর্ষালী ধান রোপন করেছি।
সরজমিনে গতকাল উপজেলার ছাতয়িানগ্রাম ইউনিয়ন,নশরৎপুর ও সান্তাহার
ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়,মাঠে আমনের আবাদ লাগানো প্রায় শেষ। পুরো
মাঠ সবুজের সমারোহ। যে কৃষকরা আউশের আবাদ করেছেন তাঁরা কোন
স্থানে দলবদ্ধভাবে কোন স্থানে একক ভাবে ধান কাটছেন । কাটা, আটিঁ
বাঁধা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষকেরা। ভ্যান,ট্রলিসহ বিভিন্ন বাহনে
করে কৃষকেরা খেত থেকে ধান ধান তুলে মারউয়ের কাজ করছেন।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক সালাম আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ’গেলবচর
বানে হামার ঘরে দুই বিঘা জমির আমন ধান নসটো হচে। এব্যারকা বোরো
ধানের ফলনও ভাল পাই নাই। তাই বানের ক্ষতি, বোরোর খতি পোষে নিবার জন্য
তিন বিঘাত বর্ষালী ধান করচি। একই গ্রামের কৃষক রহমত বলেন, একন মনে
করেন সার,তেলের দাম বেশি। ম্যালা রোগ ধরে আবাদে। বোরোত খরচ বেশি।
পোষায় না। সোংসারোত আর কোন কামাই নাই। সমিতি থ্যকা ঋণ নেওয়া
লাগচে। তাই কসটো করি দুই বিঘা বর্ষালী ধান আবাদ করচি।’
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক জানালেন আউশ ধান চাষ
করে তারা লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার ছাতীয়ানগ্রামের কৃষি শ্রমিক রফিক
বলেন, ’শ্রম বিক্রি করে সংসার চলে। কিন্তু বোরো ধান কাটার পর আমাদের
দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয়। তখন ধার দেনা বা এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়।
এখন ওই চিন্তা থেকে রেহাই পেয়েছি। কারন বোরো ধান কাটার পরই আউশ
ধান রোপন করছেন কৃষকেরা। তাই আমরা শ্রম বিক্রি করতে পারছি। এখন আর
বসে থাকতে হয় না।’
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, এ বছর
উপজেলায় ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৪০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান
চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা পূরুন হয়েছে। তিনি আরো
বলেন, বর্তমানে সেচের ওপর চাপ কমাতে কৃষকদের আউশ চাষ বাড়াতে
পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সারের কোন সংকট নেই। শ্রমিক সংকটও
নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আউশ ধান কাটা শেষে কৃষকরা ঐ জমিতেই চিনিআতব
বা আমন আবাদ করতে পারবে। যদিও আরো আগে তাঁদের আমন আবাদ রোপন
করা ভাল। তা না হলে আবাদ লোমনা হয়ে যাবে।