আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বোরো মৌসুমে এক মন ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৭০০
টাকার মতো। গত আমন ধানের দর পাওয়া গিয়েছিল এর কাছাকাছিই। এতে লাভ হয়নি,
আবার লোকসানও গুনতে হয়নি। তবে কৃষকের পুরো পরিবারের খাটুনি গেছে বৃথা। এ
হিসাব দিয়ে বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার দমদমা গ্রামের কৃষক মোবারক বললেন,
এখন বাজারে যে ধানের দাম আছে, সেটা থাকলেই ভালো। এতে মন প্রতি শ দুয়েক টাকা
লাভ করা যাবে। এখন বাজারে ধানের দাম কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে
পুরাতন আমনের সরু ধান মন প্রতি ১ হাজার টাকার কিছু বেশি দরে বিক্রি করেছেন।
এ দাম তিনি বোরো মৌসুমেও চান।
আদমদীঘিতে বির্স্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন শুধু বোরো ধান। রোপন করা পাকা ধান
কৃষক কাটতে শুরু করেছে। বগুড়ার শুধু আদমদীঘি নয়, গত কয়েক দিনে উপজেলার নশরৎপুর,
ছাতীয়নগ্রাম, সান্তাহার ইউনিয়ন ঘুরে মাঠে মাঠে বোরো ধান দেখা গেছে।
কৃষেকেরা মৌসুমী শ্রমিক দিয়ে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে। দেশের
বিভিন্ন এলাকার ম্যেসুমী কৃষক ধান কাটছে।
উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী ১২ বিঘা জমিতে
বোরো ধানের আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় ১৪ মন করে ১৬৮ মন ধান ঘরে নেওয়ার আশা
করছেন তিনি। গতকাল দৈনিক ভোরের দর্পণকে বলেন, এক বিঘা জমিতে ধান চাষে ১০০
কেজি সার বাবদ আড়াই হাজার টাকা, আড়াই কেজি বীজ বাবদ ১ হাজার ৩০০ টাকা,
চাষ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা, কীটনাশক বাবদ ১ হাজার টাকা
লাগে। এত মোট খরচ দাঁড়াই ৮ হাজার ৩০০ টাকা। ধান কাটা ও মাড়াই বাবদ ৫ ভাগের ১
ভাগ শ্রমিককে অথবা ৩ থেকে ৪ হাজা টাকা বিঘা কাটা প্রতি খরচ দিতে হয়। এরপর
ধান পাওয়া যায় ১২/১৪ মনের কাছাকাছি। মানভেদে ১৬/১৮ মনের মতো।
ওই কৃষকের হিসাব অনুযায়ী, ইরি-বোরো এক মন ধান ঘরে তুলতে খরচ হয় প্রায় ৬৯০
টাকা। সেই ধানের দাম মৌসুমের শুরুতে ৬০০/৭০০ টাকাও থাকে। মাঝামাঝিতে ৮০০
টাকা পর্যন্ত ওঠে। যদিও ক্ষুদ্র কৃষকেরা শুরুতেই ধান বিক্রি করেন। বছরের পর বছর যখন এই
অবস্থা, তাহলে কৃষক চাষ করে কেন, জানতে চাইলে তারাপুর গ্রামের বিপুল প্রামানিক
বলেন, বোরো মৌসুমে জমিতে ধান ছাড়া কিছু আবাদের সুযোগ নেই। তিনি আরও
বলেন, বোরো ধান চাষ করে কৃষকের লাভ মূলত খড়। এই খড় গরুর খাবার। আবার এক হাজার
মুঠো খড় গড়ে চার হাজার টাকা দামে বিক্রি করা যায়।
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন. এবার উপজেলায় ইরি-বোরো লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৬ শত ১৮০ হেক্টর, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার ১২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ
হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬ শত হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। আমরা কৃষক ভাইদের বলেছি ৮০ ভাগ
পাকা হলে তা কেটে ফেলতে।
নশরৎপুর ইউনিয়নের কৃষক গোলাম রব্বানীর আশংকা ধানের এখন যে দাম, তা থাকবে না।
কমে যাবে।মৌসুম শুরু হলে আর দাম মিলবে না। তিনি বলেন, একটু উচু জমি হলেই
মানুষ ধানের বদলে অন্য ফসল আবাদ করছে। দাম না পেলে ধানের আবাদ কমবেই। এখন একজন
শ্রমিকের মজুরী ৪৫০ টাকা। এত খরচ করে ধান চাষ পোষায় না ।