আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার আদমদীঘিতে ক্ষুরা ও ল্যাম্পি স্কিনরোগে
(এলএসডি) আক্রান্ত হয়ে গরু মারা যাচ্ছে। উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে এই
রোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস বলছে, গরুর উপসর্গ দেখে
ধারনা করা যাচ্ছে এ রোগ ক্ষুরা ও ল্যাম্পিস্কিন রোগ। এটা ক্ষুরা রোগের নতুন ধরণ।
এই রোগে আক্রন্ত হয়ে পশু অসুস্থ্য হওয়াতে এবং মারা যাওয়াতে খামারী ও পশু
ব্যবসায়ীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে উপজেলার কয়েকটি স্থানে গরুর ক্ষুরা রোগ ও ল্যাম্পি স্কিন রোগ
দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা
গ্রামেই শুধূ গত ১৪ দিনে প্রায় ২১ টি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা
গেছে। একই গ্রামের মাজেদুর রহমান জানান, আমাদের গ্রামের হাসান নামে
এক গরু ব্যবসায়ীর একটি গরু মারা গেছে খুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে। যার
আনুমানিক মূল্য ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে উপজেলায় নানা স্থানে এই রোগে গরু
আক্রান্ত হবার খবর আসছে। আদমদীঘি প্রাণী সম্মদ কর্মকর্তারা বিষয়টি ব্যবস্থা
নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু পশু খামারী ও ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ
জানিয়েছেন।
গ্রাম্য চিকিৎসকরা জানিয়েছে, বাজারে এই রোগের ভ্যকসিন পাওয়া যাচ্ছে।
মূলত এটি ্ধসঢ়;একটি প´ ভাইরাস বা ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসজনিত ওষূধ।
এই রোড়ে আক্রান্ত গরুর প্রথমে জ্বর আসে এবং খাবার রুচি কমে যায়। পা ফুলে
যায়, মুখে লালা পড়ে এবং এই রোগ দ্রæত অন্য গরুকে আক্রান্ত করে। গরুর গায়ে
পি-আকৃতি ধারণ করে। পুরো শরীর ঘা সৃষ্টি হয় এবং গরু মারা যায়।
আজ (বুধবার) উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ঐ
গ্রামের হাসান নামে একজনের ১৪ মন ওজনের একটি ফ্রিজিয়ান গরু
খুরারোগে বা ল্যম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ ছাড়া দক্ষিণ পাড়ার
বাসিন্দা ভুট্রুর ১ টি, নজরুল, রবিঊল, পিন্টু, ফেরদৌস, চাঁন মিঞা, নান্টু,
মেজর, বগা, র ায়হান, হাসান আলী ও বাদল মিঞা প্রমুখের একটি করে মোট ২১
টি গরু খুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এক রোগে আক্রান্ত হয়ে এক
গ্রামে এতগুলি গরু মারা যাওয়ায় পুরো গ্রামে শোক দেখা দিয়েছে।
দমদমা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী হাসান বলেন, গত কোরবানি ঈদে আমার গরুর দাম
উঠেছিল ৪ লাখ টাকা। ইচ্ছে ছিল আরো একটু বড় করে সামনের কোরবানির ঈদে
এটি বিক্রি করবো। তার আগেও গরুটি মারা গেল। আমার সব শেষ। আরেক
ব্যবসায়ী নজরুল বলেন, আমারও একটি গরু মারা গেছে। আমি নিঃস্ব হয়ে
গেলাম। আমাদের সমাজে ক্ষতিপূরনের কোন ব্যবস্থা নেই কেন ?
উক্ত খবর পেয়ে ঐ গ্রামে আসেন উপজেলা প্রাণী সম্মদ কর্মকর্তা ডাঃ আমিরুল
ইসলাম ও তার দল। তাঁরা ঐ গ্রামের গরু ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
আমিরুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, খুরা ও ল্যাম্পি স্কিন এ দুটি গরুর ভয়ানক
রোগ। নিয়মিত প্রতিষেধক না নিলে আক্রান্ত গরুকে বাচাঁনো যায় না। আসলে
অনেক গরু ব্যবসায়ী উপজেলা প্রাণী সম্মদ অফিসে পরামর্শ না দিয়ে অনভিঞ্জ
গ্রাম্য পশূ চিকিৎসকের কাছে এসব বিষয়ে চিকিৎস নেন। ফলে আক্রান্ত গরু
ভুল চিকিৎসায় তাড়াতাড়ি মারা যায়।
একটি গ্রামে একই সাথে এতগুলি গরুর মৃত্যু পুরো উপজেলার গরু ব্যবসায়ীদের
ভাবিয়ে তুলেছে। উপজেলা ডেইরি এ্যসোসিয়শনের সাধারন সম্পাদক নিগার
সুলতানা বলেন, গরুকে নিয়মিত ভ্যাকসিন ও অনান্য ওষুধ দিতে হবে। আর উপজেলা
প্রাণী সম্মদ অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
উপজেলা প্রাণী সম্মদ কর্মকর্তা ডাঃ আমিরুল ইসলাম জানান, বেশি গরু মারা
যাওয়া ও আক্রান্ত হওয়া দমদমা গ্রামে একটি অভিজ্ঞ দল নিযুক্ত করা হয়েছে। যারা
পুরো গ্রামকে মনিটরিং করবে। তা ছাড়া আমরা বগুড়া প্রাণী সম্মদ অফিসের
সাথে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।