আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ শষ্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত বগুড়ার আদমদীঘি
কৃষকরা এখন চলতি মৌসুমের আমন ধান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।
আদমদীঘির বির্স্তীর্ণ ফসলের মাঠে এখন শুধু আমন ধান। পুরো মাঠ জুড়ে
সবুজের সমারোহ। কৃষকেরা এখন ফসল পরিচর্চায় ব্যস্ত। কোন ক্ষেতে চলছে
আগাছা পরিস্কার, কোন ক্ষেতে চলছে সেচ ও সার এবং কীটনাশক স্প্রে’র
কাজ। কিন্তু পূব আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখলে কৃষকের শংকা বাড়ছে।
এরমধ্যে দেশের কোন কোন অঞ্চলে শিলা বৃষ্ঠি হওয়াতে উপজেলার কৃষকরা
কিছুটা চিন্তিত। এরপর আছে নায্য দাম পাবার চিন্তা।
আজ ১১ সেপ্টম্বর সরজমিনে আদমদীঘি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে
গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি মাঠ জুড়ে আমন ধানের সমারোহ। চারিদিকে
সবুজে সবুজে আচ্ছাদিত আছে মাঠ। কোন কোন এলাকায় আগাম
ধানের শীষে উকি দিচ্ছে নতুন ধান।। কৃষকরা জানান, আবাদ ভাল হয়েছে।
এখন চিন্তা,ঘরে ধান ভাল ভাবে তোলার। কৃষকরা আরো জানান, এই আবাদে
তারা সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে। এই ধানের মাঠই তাঁদের প্রাণ।
আমন মৌসুমে একমন ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৮০০ টাকার মতো। গত বছর
বোরো ধানের দর পাওয়া গিয়েছিল এর কাছাকাছিই। এতে তেমন লাভ হয়নি,
আবার লোকসান গুনতেও হয়নি। তবে কৃষকের পুরো পরিবারের খাটুনি গেছে
বৃথা। এ হিসাব দিয়ে বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার
ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের কৃষক মোবারক রহমান বলেন, এখন বাজারে যে
ধানের দাম আছে, সেটা থাকলেই ভালো। এতে মন প্রতি শ’পাচেক টাকা
লাভ টাকা লাভ করা যাবে।
আদমদীঘির মাঠে এবার আমন আবাদ ভাল হয়েছে। রোপন করা চারা এখন
মাঝবয়সী অবস্থায় আছে। যা থেকে ধান পেতে কোন কোন এলাকায় ১৫
দিন, কোন কোন এলাকায় মাস খানেক লাগতে পারে। কৃষক ভালো আবাদের
আশায় সর্বশ্ব বিনিয়োগ করেছে আমন আবাদে। বগুড়ার শুধু আদমদীঘি
নয়, গত কয়েক দিনে উপজেলার নশরৎপুর, ছাতিয়ানগ্রাম, চ্ধসঢ়;াঁপাপুর,
সান্তাহার ইউনিয়ন ঘুরে মাঠে মাঠে আমন ধান দেখা গেছে। সব স্থানেই
আবাদ ভালো হয়েছে। কৃষি উপকরনের কোনো ঘাটতি নেই এবার। কৃষি
বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে।
উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রামের কৃষক রমজান আলীন ১২
বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় ১৪ মন করে ১৬৮ মন
ধান ঘরে নেওয়ার আশা করছেন তিনি। গত সোমবার তিনি বলেন, এক বিঘা
জমিতে ধান চাষে ১০০ কেজি সার বাবদ আড়াই হাজার টাকা, আড়াই
কেজি বীজ বাবদ ১ হাজার ৩০০ টাকা, কীটনাশক বাবদ ১ হাজার টাকা
লাগে। এতে মোট খরচ দাড়ায় ৮ হাজার ৩০০ টাকা। এ ছাড়া ধান কাটা ও
মাড়াই বাবদ ৫ ভাগের ১ ভাগ শ্রমিককে অথবা ২/৩ হাজার টাকা বিঘা
প্রতি খরচ দিতে হয়। এরপর ধান পাওয়া যায় ১৬/১৮ মনের কাছাকাছি।‘
আদমদীঘি কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আদমদীঘি
উপজেলায় ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা
হয়েছে। এবারে কৃষকরা জিরাশাইল, পারিজা,ব্রিধান-২৮,২৯,৬৪,হাইব্রিড-
৫ সহ প্রভৃতি জাতের ধান চাষ করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবারে
আবাদ ভাল হয়েছে। তবে ভয়টা প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে
থাকলে এবারও বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রায়েছে। কৃষি উপকরণে কোন সংকট
সৃষ্টি হয়নি। আমরা কৃষক ভাইদের এবারের শষ্য বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে
যাচ্ছি।