নিউজ ডেস্কঃ– রমজান সামনে রেখে অস্থির হয়ে উঠেছে খেজুরের বাজার। সরকার ১০ শতাংশ শুল্কও ছাড় দেওয়ার পরও নানান অজুহাতে আমদানি মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। খেজুরের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ইফতারে খেজুর না খেয়ে বরই ও পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তার এমন বক্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গনে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
গত ৪ মার্চ রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী বলেন, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, আঙুর, খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতার করেন। দেশি ফল দিয়ে ইফতারের প্লেট সাজান। ওই দিন বিকেলে এক সমাবেশে শিল্পমন্ত্রীর এ খথার তীব্র সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি বরই দিয়ে ইফতার করবো। আর তুই খেজুর-আঙুর খাবি? তা হবে না, তা হবে না।’
আর কিছুদিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র রমজান মাস। বাংলাদেশসহ গোটা মুসলিম বিশ্বেই রমজানে সারা দিন রোজা রেখে সাধারণত খেজুর দিয়েই ইফতার শুরু করার অভ্যাস প্রায় সবারই আছে। বিশেষ করে বিষয়টি সুন্নত হিসেবেই পালন করে থাকেন রোজাদাররা।
রমজানে খেজুর কেন খাওয়া হয়? কিংবা খেলে কী ধরনের উপকার পাওয়া যায়?- এসব বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইসলামিক চিন্তাবিদ ও পুষ্টিবিদরা।
তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া ইসলামিক চিন্তাবিদ ও পুষ্টিবিদদের কাছ থেকে। এর ভেতর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নানা গুরুত্বের কথা বলছেন ইসলামিক চিন্তাবিদরা। তারা বলছেন, ইফতারিতে খেজুর খাওয়া সুন্নত আমল। তাই ফলটি দিয়ে ইফতার করলে আলাদা সওয়াব পাওয়া যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, রোজা থাকার পর সুগার লেভেল কমে যায়। আর ইমিডিয়েট সুগার সোর্স হিসেবে খেজুর খুব ভালো কাজ দেয়।
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, রোজা থেকে সারাদিন পানি পান না করার কারণে নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া দেহে গ্লুকোজ শর্ট হয়ে যায়। এটি পূরণে চিনির শরবতের চেয়ে অনেক ভালো খেজুর খাওয়া। কারণ খেজুরে কোনও ফ্যাট নাই। সারাদিনের পুষ্টির ঘাটতি খেজুর খেয়েই পূরণ করা সম্ভব। এমনকি এটি ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে ৩০১ কিলোক্যালরি এনার্জির সঙ্গে ময়েশ্চার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার ও ভিটামিন থাকে। রোজা রাখার পর খেজুর খেলে একধরনের বাড়তি এনার্জি পাওয়া যায়।
‘খেজুরের বিকল্প বরুই’ এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, ‘খেজুরের চেয়ে বরইতে ক্যালরি অনেক কম থাকে। সেই সঙ্গে অন্যান্য পৌষ্টিক উপাদানগুলোও বরইতে খেজুরের তুলনায় কম।’
ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টারের প্রধান পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, ‘বরইয়ের মধ্যেও খুবই ভালো বা উপকারী নিউট্রিয়েন্ট থাকে। তবে তা খেজুরের বিকল্প কখনোই হতে পারেনা।’
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নানা গুরুত্বের কথা বলছেন ইসলামিক চিন্তাবিদরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘ইসলামের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) খেজুর খেতেন। এবং তার খেজুরের প্রতি বেশি আকর্ষণের ফলে এটা তখন সবার মাঝখানে বরকতের বিষয় হিসেবে গণ্য হতো। কালের ধারাবাহিকতায় এখনও এটা প্রচলিত রয়েছে। এটা রাসুলের সাথে আমাদের আবেগ ও ভালোবাসার একটা সম্পর্ক।’
তিনি বলেন, রমজানের ইফতারিতে খেজুর মানুষের মনের আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। যদি সেটা সুলভ হয় তাহলে মানুষের চাহিদাটা মিটে। কিন্তু বাজারদরের ব্যাপারটা মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে মানুষ অস্বস্তিবোধ করে। -বিবিসি।
অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম খেজুরের বিকল্প হিসেবে বরই খাওয়ার এ বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রী বা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এসব জিনিসের প্রতি সংবেদনশীল নন বলেই এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে আহত করছেন। অথচ খাদ্যসামগ্রীর দাম মানুষের আয়ত্তের মধ্যে রাখার যে দায়িত্ব, সেটি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
তবে ধর্মীয়ভাবে ইফতারে খেজুর যে খেতেই হবে বা বাধ্যতামূলক নয় বলেও অনেক ইসলামিক চিন্তাবিদ জানিয়েছেন। অধ্যাপক ইব্রাহিমের মতো আরও অনেকেই বলছেন, বাধ্যতামূলক না হলেও খেজুর ছাড়া রোজার ইফতারি অনেকটা অসম্পূর্ণ মনে হয়।