হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে দ্রুত নিষিদ্ধের দাবিতে ক্ষোভ ও বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম।অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা সমাবেশ করেছে চট্টগ্রামে। ভারতে বসে বাংলাদেশকে নিয়ে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার ঘোষণাও দেয়া হয় সমাবেশ থেকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ নেতৃবৃন্দ সমাবেশে এই ঘোষণা দেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের টাইগার পাস মোড় চত্বরে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নৃশংসভাবে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা শেষে আয়োজিত শোক এবং সম্প্রীতি সমাবেশে এসব কথা বলেন তারা।
এ সময় টাইগার পাস চত্বরে উপস্থিত হাজারো ছাত্র-জনতাকে ইসকন জঙ্গি, স্বৈরাচারের সঙ্গীসহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এদিন নগরীর বহদ্দারহাট, কোর্ট বিল্ডিং, ওয়াসা, নিউমার্কেট চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভুলে যাইনি আওয়ামীলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় গত ১৬ বছর এই ইসকন কিভাবে বেড়ে উঠেছে, আজকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে স্বৈরাচারের সঙ্গি হয়ে ভারতের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা দেখেছি, ৫ আগস্টের পর দাঁড়িওয়ালা-টুপিওয়ালারা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছে। তবুও উগ্র হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠন সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইকে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই ভারতে বসেই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা যত ষড়যন্ত্রই করুন না কেন, আমরা রুখে দেব। বাংলাদেশে সকল ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। ধর্মের নামে উগ্রবাদীতার এখানে ঠাঁই নেই। ইসকনের বর্বরতা আইয়ামে জাহেলিয়াতকে হার মানিয়েছে। তাই অবিলম্বে জঙ্গি সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ করতে হবে।
জঙ্গি সংগঠন ইসকনকে বিতাড়িত করা হাতের ময়লা- উল্লেখ করে শোক সমাবেশের বক্তব্যে নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, তাদের কর্মকাণ্ড আমাদের হতবাক করেছে। এই দেশের সাধারণ সনাতনী ভাইয়েরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার দালালরা ইসকনকে উস্কে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দিব না। ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ‘যে রক্তের উপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যে রক্তের উপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে, সেই রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এই চিন্ময়রা উসকানি দেয়। সেই রক্তের উপর দাঁড়িয়ে খুনি হাসিনারা উসকানি দেয়। সেই রক্তের উপর দাঁড়িয়ে জঙ্গি ইসকনরা উসকানি দেয়। সেই রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ভারতের কিছু প্রেতাত্মা উস্কানি দেয়। আমরা ১৬ বছরের খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়া করেছি এবং ছোটোখাটো কিছু জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের জন্য হাতের ময়লা।’
বাংলাদেশের প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে অভিযোগ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই প্রশাসনের যেসকল জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরেরা এখনো বিরাজমান তাদেরকে সমূলে নির্মূল করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না। ভারতীয় কোনো আগ্রাসন বাংলাদেশে চলবে না। যদি কেউ ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাহলে আমরা বাংলাদেশের ছাত্রজনতা তাদেরকে প্রতিহত করতে একবারও ভাববো না।’
ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এই বাংলাদেশে কোনো উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের ঠাঁই হবে না, কেউ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এই বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা ১৫ দিনের মধ্যে ইসকনকে নিষিদ্ধকরণ চাই। ইসকনের সন্ত্রাসীরা গতকাল আমাদের ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে, আমরা এর বিচাই চাই। পুলিশ প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝুলাতে হবে।’