নিউজ ডেস্কঃ- অর্ধেকের বেশি রোজা শেষ, ঈদ আসতে বেশি দেরি নেই। অথচ এখনো বেচাকেনা জমে উঠেনি রাজধানীর মিরপুরের বেনারসি পল্লিতে। প্রতিবছর ঈদুল ফিতর আর অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা ঘিরে শাড়ি বিক্রির আশায় বসে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বেচাকেনা খুব একটা ভালো হচ্ছে না এই মার্কেটে। যদিও বিয়ে-বৌভাত, উপহার হিসেবে শাড়ির জন্য মিরপুরের বেনারসি পল্লি সব সময় সরগরম থাকে।
বেনারসি পল্লিতে ছোট-বড় মিলে শতাধিক দোকান আছে। শুক্রবার (২৯ মার্চ) বেনারসি পল্লি ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি দোকানে ক্রেতারা শাড়ি দেখছেন। তবে অধিকাংশ দোকানই প্রায় ক্রেতাশূন্য।
প্রত্যেক দোকানের বাইরে টুল পেতে বসেছেন বিপনন প্রতিনিধিরা। তারা হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। আর দোকান ব্যবস্থাপকরা গদিতে গালগল্পে কিংবা মোবাইল চালিয়ে সময় পার করছেন। কেউ কেউ শাড়ি গুছিয়ে রাখছেন।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেনারসি ছাড়াও ঢাকাই মসলিন, জামদানি, টাঙ্গাইল তাঁত ও হাফ সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জর্জেট, কাতানসহ নানা ধরনের বাহারি কাপড় পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি হয় দোকানগুলোতে। এখন ঈদ উপলক্ষে মসলিন, বেনারসি, হাফসিল্কের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। মানভেদে এসব শাড়ির দাম ২৫০০ টাকা থেকে থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে ৫ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে শাড়ি বেশি বিক্রি।
যদিও বিক্রেতাদের দাবি ঈদ উপলক্ষে আশানুরুপ বিক্রি নেই। বেচাকেনা কম ও ঈদে কর্মীদের বেতন ও বোনাস দেওয়ার দুশ্চিন্তাও রয়েছে তাদের।
‘ইন্ডিয়ানা শাড়িজ’ এর বিক্রয় প্রতিনিধি আজিজ বলেন, শুক্রবার দেখে আজকে ক্রেতা কিছুটা বেশি। ক্রেতা বেশি হলেও বেচাকেনা কম।
বেনারসি কুঠির স্বত্বাধিকারী রুমি বলেন, বেচাবিক্রি সেভাবে নেই। সারাদিনে হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা আসে। ইফতারের পর কিছুটা বিক্রি বাড়ে। তবে সেটা ঈদের বাজারের বিক্রি বলা যায় না।
বেচাকেনার ওপরে ব্যবসায়ীদের সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার কথা জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ভ্যাট তো ক্রেতার কাছ থেকে নিয়েই দিতে হয় আমাদের। অনেক ক্রেতাই ভ্যাট দিতে চায় না। তখন সেটা আমাদের লাভের অংশ থেকে দিয়ে দিতে হয়।
শামিউল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ঈদ বাজারে বেনারসি পল্লির কদর হারাচ্ছে। শেষ সময়ে কিছুটা বেচাকেনা হয়। আগের মত ঈদের আমেজ নেই। করোনার আগেও মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে আমরা সব স্টাফদের বেতন দিতে পারতাম। তবে এখন সেটা পারছি না।
তিনি বলেন, ঈদের পর বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য শাড়ি নিচ্ছেন ক্রেতারা। শাড়ি ৫-৬ হাজার টাকার একটাই। আগের মত ৩-৪ টা শাড়ি বিক্রির চল নেই। অনেকেই মনে করেন, এটা একটা বিয়ের শাড়ির মার্কেট। এর ফলে এই মার্কেটের ঈদের নির্ধারিত খুচরা কাস্টমার বাদে বাকিরা ভিড় করে না। যদিও এখানে সব ধরনের শাড়ি পাওয়া যায়।
স্ত্রীকে নিয়ে শাড়ি কিনতে এসেছেন চাকরিজীবী আবদুল গণি। তিনি বলেন, বাসা কাছেই তাই এখানে এলাম। দোকানদাররা অতিরিক্ত দাম চায়৷ ৪-৫ হাজার টাকা হাতে রেখে দাম বলে। কিছু কিছু দোকানে এমন দাম চায় যে সাধারণ ক্রেতাদের দাম বলাও দুষ্কর। এ জন্য দেখে শুনে দরদাম করে শাড়ি কিনতে হয়।
দাম নিয়ে একই অভিযোগ জানালেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী শামিমা হক। তিনি বলেন, এখানে এত বেশি দাম চায়, যাতে ক্রেতা সাধারণ ভয় পায়। যেমন, কোনো শাড়ির দাম যদি হয় ১ হাজার টাকা, ঐ শাড়ির দাম চায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। একটা বিয়ের শাড়ির জন্য কয়েক ঘণ্টা ধরে ঘুরছি। শাড়ি পছন্দ হয়। তবে দাম ২-৩ হাজার টাকার পার্থক্য থাকছে।