বগুড়া প্রতিনিধিঃ- কয়েকদিনের হাড় কাঁপানো শীতের পর গতকাল সোমবার বগুড়াসহ দেশের অনেক এলাকায় সূর্যের দেখা মিলেছিল। কিন্তু রাত থেকে ফের শীত বাড়ার পাশাপাশি কুয়াশার দাপট ছিল আগের মতই। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি।
বগুড়ায় গতকাল মঙ্গলবারের (১৬ জানুয়ারি) চেয়ে তাপমাত্রা আরও কমে রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে তীব্র শীত ও ঘণ কুয়াশার জন্য বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে যেসব জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামবে সে জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজ এবং কাল বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। এতে ফের শীতের তীব্রতা যে বাড়ছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আজ মাঘ মাসের ৩য় দিন। ‘মাঘের শীতে বাঘ কাঁপে’ গত কয়েকদিনের শীতের অবস্থা দেখে পুরাতন প্রবাদ বাক্যটাকে অনেককেই আওড়াতে দেখা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বগুড়ায় এ মৌসুমের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘলা আকাশ, সাথে ছিল কনকনে শীত। শৈত্যপ্রবাহ না হলেও এমন হাড় কাঁপানো শীত অনেকদিন দেখেনি। ষাটোর্ধ গোলেজা বেগম জানান, এমন শীত যে কাপড়ের মধ্যে দিয়ে শরীরে ঠান্ডা লাগছে। দিনে-রাতে কোনসময় শান্তি নেই। হাত-পা গরম হচ্ছে না।
ওজুর জন্যও পানিতে হাত দেয়া যাচ্ছে না। শীত ও কুয়াশার কারণে একই অবস্থা হয়েছে প্রাণিকুলের মধ্যেও । গবাদি পশু থেকে শুরু করে বন্য প্রাণিরাও জুবু থুবু হয়ে আছে। গাছের ডালে ঘরের কোনে ঘাপটি মেরে আছে। তীব্র শীতে বের হতে না পেরে আয় রোজগারে টান পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। বাড়ি বাড়ি গৃহপরিচারিকার কাজ করা শ্রমিকরা সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন।
ভোগান্তিতে পড়েছে সকালবেলা স্কুলে যাওয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কুয়াশা ও শীত থেকে বাঁচতে অভিভাবকরা আপাদমস্তক ঢেকে তাদের স্কুলে পৌছে দিচ্ছেন। ক্ষতি হচ্ছে রবিশষ্যের। ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা ভিড় করছেন হাসপাতালে।
তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। কিন্তু পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে তবে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়।
অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম ও একটু বেশি। এজন্যই শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কোথাও কোথাও তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বলে ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম।
বগুড়া আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার এই ব্যবধান কমে যাওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও তাতে শীতের অনুভূতি তেমন একটা কমবে না।
বুধবার থেকে দেশের অনেক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি অথবা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এরপর আবারও শীতে প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
নীলফামারী (ডমার) প্রতিনিধি: হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে জেলার সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামিম হোসেন জানান, জেলায় আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি বলেন,‘ এ অবস্থা আরো দুই দিন চলবে। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের তীব্রতা থাকবে’।
নওগাঁ প্রতিনিধি: তীব্র শীত ও হিমেল হাওয়া বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁয় ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে হঠাৎ রোগির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসক ও নার্সদের।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের হাকিমপুর হিলিতে ঘণ কুয়াশা,মেঘলা আকাশ,হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশার কারণে রাস্তা-ঘাট কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ খেটে যাওয়া মানুষ। কাজের সন্ধানে বের হয়েও কাজ পাচ্ছেন না তারা। দোকানপাট খুলছে দেরিতে। বেশি কষ্টে আছেন ছিন্নমূল ও বৃদ্ধ মানুষেরা।
শীতের কারণে ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়ারিয়ায় প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুসহ নানা বয়সের নারী পুরুষ ডায়রিয়া, গলা ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ও চিকিৎসকরা ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।
দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে জেঁকে বসেছে শীত। ঘণ কুয়াশার জন্য সারাদিন দেখা মিলছে না রোদের। হিমেল বাতাসে দুর্ভোগে পড়েছে জনজীবন।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: প্রচন্ড শীতে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ’র জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে নিম্নআয়ের লোকজন। শীতজনিত রোগ বালাইয়ের কারণে স্থানীয় হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বাড়ছে আশস্কাজনক হারে।
গত এক মাসে তাড়াশ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আন্তঃ এবং বর্হির বিভাগে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তিসহ ৪ শতাধিক ডায়রিয়া ও ২ শতাধিক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগি চিকিৎসা নিয়েছেন।
মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: উত্তরের সীমান্তবর্তী নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলাবাসী প্রচন্ড শীতে কাঁপছে । শীতের দাপটে অসহায় হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। শীত নিবারণে সাধারণ মানুষ খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। উপজেলা সদরের গুদুড়ী পট্টি শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সরকারি বা বে-সরকারিভাবে এ পর্যন্ত উপজেলায় শীতবস্ত্র বিতরণ করতে দেখা যায়নি।