উল্লাপাড়া সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এবারের মৌসুমে শুটকি চাতালগুলোয় মাছের ঘাটতি নেই। এদিকে বিভিন্ন মোকাম বাজারে এখানকার শুটকি মাছের চাহিদা বেশী। আরো মাস চারেক সময় মাছ শুটকির চাতালগুলো চালু থাকবে। এক সিজনে শত জনগণের মণ মাছ শুটকি করা ও বিক্রি হয়। এখানে একজন নারী শ্রমিক মাছ বাছাই কাজে দিনের মজুরীতে দুইশো টাকা পান। এসব কথা শুটকি চাতালের একাধিক মালিক জানিয়েছেন।
উল্লাপাড়া উপজেলার বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়ন এলাকার উধুনিয়া সড়ক পথের ধারে বড় ধরণের গোটা দশেক শুটকি চাতাল বিগত বছরগুলোর মতো এবারেও করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শুটকি চাতাল এখানে করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার আরো বিভিন্ন এলাকায় মাছ শুটকি করার চাতাল করা হয়েছে।
প্রায় সব ধরণের মাছ এসব চাতালে শুটকি করা হয়। তবে দেশীয় পুটি, চাপিলা , টেংরা , চেলা মাছ বেশী পরিমাণ শুটকি করা হয়। বর্ষাকালের প্রথম দিকে পাথার প্রান্তরের উধুনিয়া , মোহনপুর , বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়ন এলাকায় বন্যার পানি আসার কিছুদিন পরই চাতালগুলো করা হয়েছে। মাস চারেক হলো চাতালগুলো করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সড়কের দুধারে চাতালগুলোয় মাছ শুটকি করা হচ্ছে। নানা জাতের ( নামের ) মাছ রোদে মেলে দেওয়া হয়েছে । এখানকার একটি মাছ আড়তে চাতাল মালিক তিনজনের সাথে নানা বয়সী আট থেকে দশ জন গ্রামীণ নারী শুটকি মাছ বাছাইয়ের কাজ করছেন।
প্রতিবেদককে চাতাল মালিকদের দুজন মো. হান্নান শেখ ও মো. শাহ আলম বলেন তারাসহ এলাকার সাতজন মিলে সমান ভাগে ( সমান মালিকানায় ) অনেক বছর থেকেই মাছ শুটকির চাতালগুলো করে ব্যবসা করে আসছেন। ভরা বর্ষাকালে মাছের আমদানি বেশী পরিমাণ হয়। এলাকার হাট বাজারগুলো থেকে মাছ কিনে এনে শুটকি করেন। এছাড়া এলাকার ডোবা , নালাগুলো থেকে ধরা মাছ জেলেদের কিংবা মলিকদের কাছ থেকে কেনেন। আরো মাস চারেক সময় চাতালগুলো চালু থাকবে বলে জানানো হয়। এখানকার শুটকি মাছ উত্তরাঞ্চলের সৈয়দপুর , জয়পুরহাট , রংপুরসহ আরো বিভিন্ন মোকাম বাজারে পাঠানো ও সেখানে পাইকারী বিক্রি হয়। উল্লপাড়া অঞ্চলে সিজনকালে শত শত মণ মাছ শুটকি করা হয়। এসব মাছ বিক্রি হয় মোকাম বাজারে। প্রতিবেদককে এরা দুজনসহ বেশ কজন শুটকি চাতাল মালিক বলেন বড় পাঙ্গাসী কিংবা উধুনিয়া এলাকায় সুবিধামতো জায়গায় ছোটো ধরণের একটি মাছ সংরক্ষণাগার থাকলে শুটকি করার কাচা মাছ ও শুটকি মাছ সংরক্ষণ করে রাখা গেলে এলাকায় মাছ শুটকি চাতাল ব্যবসা আরো অনেকেই করবেন।
এদিকে প্রতিবেদককে আড়তে মাছ বাছাই কাজ করা নারীরা আশেপাশের গ্রামের বসতি গৃহবধূ বলে জানান। এদের কজন নুরজাহান বেগম , ছমিরণ খাতুন , মাহেলা খাতুন বলেন সংসারের বাড়তি আয়ে তারা সবাই মাছ বাছাইয়ের কাজ করেন। শুটকি মাছ বাছাই বলতে বড় ছোট এবং মাছের জাত বাছাই করেন । তারা দিনের ছয় থেকে সাত ঘণ্টা কাজে মজুরী বাবদ দুইশো টাকা পান। আবার কোনো কোনো দিন আড়াইশো টাকা পান বলে জানানো হয়।
এরা জানায় চাতালগুলো চালু যতদিন থাকবে তারা আড়তে মাছ বাছাইয়ের কাজ করতে পারবেন।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান দেশের বিভিন্ন মোকাম বাজারে এখানকার চাতালগুলোর শুটকি মাছের বেশ চাহিদা আছে বলে তিনি জেনেছেন। উল্লাপাড়া উপজেলা অঞ্চলে একটি মৎস্য সংরক্ষণাগার নির্মাণে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠানো আছে। বেসরকারী উদ্যোগে মৎস্য সংরক্ষণাগার করা হলে তার বিভাগ থেকে দরকার হলে পরামর্শ সহযোগিতা করা হবে।