নিউজ ডেস্কঃ- পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয় কালো দানা বা বীজ, যার বাজারদর আকাশচুম্বী। তাই পেঁয়াজের বীজকে বলা হয় কালো সোনা। একটা সময় পেঁয়াজবীজ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর থাকলেও দিনে দিনে দেশে ‘কালো সোনা’খ্যাত পেঁয়াজবীজের আবাদ বাড়ছে। বর্তমানে সারা দেশে পেঁয়াজবীজের যে চাহিদা, তার ৬০ ভাগ জোগান দেয় ফরিদপুর জেলা। তারই ধারাবাহিকতায় সদরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি জুড়ে চাষ হয়েছে পেঁয়াজের (দানা) বীজ। চারদিকে সাদা ফুলের সমারোহ। যার স্থানীয় নাম কদম আর এই কদম থেকেই হবে বীজ।
জানা গেছে, এ উপজেলার উত্পাদিত দানার গুণমান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পেঁয়াজচাষিরা এসে বীজ ক্রয় করে নিয়ে যায়। উপজেলার ভাষানচর, আকোটের চর, চর বিষ্ণুপুর, কৃষ্ণপুর ও সদর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে চাষ হয়েছে দানা পেঁয়াজের। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে পেঁয়াজ বীজের চাষ শুরু হয়। ফুল পাকে চৈত্র মাসে। আর কয়েক দিন পরই পাকতে শুরু করবে এ ফুলের বীজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের ফুল ভালো হওয়া ও সার, বীজ সময়মতো পাওয়ায় কৃষক ভালো ফলনের আশা করছেন। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘা জমিতে তিন থেকে চার মণ পর্যন্ত দানা উত্পাদন হয়ে থাকে। প্রতি বিঘা জমিতে দানা আবাদে, সার, বীজ, সেচ, কীটনাশকসহ অন্যান্য সব মিলে খরচ হয় দেড় লাখ টাকার মতো। প্রতি মণ দানা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাজারদরে বিক্রি হয়। তাই পেঁয়াজের দানাকে ‘কালো সোনা’ বলে আখ্যায়িত করা হয় ।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের কৃষক, আব্দুল হাই মোল্লা জানান, পেঁয়াজের দানা চাষ বেশ লাভজনক, তবে ঝুঁকি অনেক থাকে, ঝড়, বাদল, শিলাবৃষ্টি হলে অনেক সময় লোকসানেও পড়তে হয়। আরেক কৃষক ভাষানচর ইউনিয়নের সাহেব বেপারী জানান, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় এ বছর ফলন বেশ ভালো হয়েছে, যদি বড় ধরনের ঝড়-বৃষ্টি না হয়, তাহলে আমরা বেশ লাভবান হব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটল রায় জানান, এ বছর চলতি মৌসুমে উপজেলায় হালি পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৩৮৬ হেক্টর জমি, তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪৬৯ হেক্টর, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন ছিল ৮৩ হেক্টর বেশি। তবে দানা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫৫ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হলেও ভালো ফলন হওয়ার কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা রাখছেন। ভালো মুনাফা পাওয়ায় কালো সোনাখ্যাত পেঁয়াজের বীজ চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। পাশাপাশি তরুণরাও বীজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এছাড়া সরকারের বিশেষ তদারকি থাকায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ এই পেঁয়াজ উত্পাদনে কৃষকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছে।