কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট কৃষ্ণনন্দবকশী সীমান্তে উসকানিমূলক বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে বাংলাদেশিদের বেধড়ক পিটিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত শুক্রবার দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট কৃষ্ণনন্দবকশী সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ৯৩০-এর কাছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
বিএসএফের হামলায় আহত হয়েছেন ছয় বাংলাদেশি। তারা হলেন ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালাটারী গ্রামের কৃষক সামছুল আলম (৬০), কৃষ্ণনন্দীবকশী গ্রামের মৃত খোকা মামুদের ছেলে জাবেদ আলী (৬০), মোন্নাফ হোসেনের ছেলে কাশেম আলী (৪৮), মৃত মুকুল ইসলামের ছেলে রিপন মিয়া (৩৫), কাশেম আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম (৩৮) ও মৃত মুকুল মিয়ার ছেলে লিমন মিয়া (২০)।
স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশিদের ওপর বিএসএফের উসকানিমূলক হামলার খবর তাৎক্ষণিকভাবে সীমান্তবাসীর মাঝে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তে শত শত স্থানীয় বাসিন্দা লাঠিসোটা নিয়ে সীমান্তে ছুটে আসেন। এ সময় পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যায় ১০-১২ জনের বিএসএফ দলটি। এ ঘটনায় বর্তমানে সীমান্তে বিএসএফ সদস্য মোতায়েন জোরদার করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ঢুকে বাংলাদেশিদের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার দুপুর ১টা ৪২ মিনিটে ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোড়কমণ্ডপ গ্রামের নামাটারী সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ৯২৯-এর ৩ ও ৪ সাব-পিলারের মধ্যবর্তী বাঁশেরতল এলাকায় বিজিবি-বিএসএফের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক ঘণ্টার ওই পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিজিবির প্রতিবাদে বিএসএফ এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরে বিএসএফের প্রবেশের ঘটনা ও বাংলাদেশিদের ওপর হামলা আর ঘটবে না। পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল শাহ মোহাম্মদ শাকিল আলম। অপরদিকে ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কোচবিহার ১৪ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার অমিত কুমার সাহা। পতাকা বৈঠক শেষে উভয়পক্ষের কমান্ডিং অফিসাররা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সরেজমিন জানা গেছে, প্রথমে ভারতীয় নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের বিএসএফের পাঁচ সদস্য আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার অতিক্রম করে বাংলাদেশের বারোমাসিয়া নদী পার হয়ে ২০০ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তরের পশ্চিম বালাটারী সীমান্ত গ্রামের কলেজ প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে বাংলাদেশিদের ওপর হামলা চালায়। এতে পাঁচজন আহত হন।
পরবর্তী সময়ে বিএসএফ দুপুর ২টার দিকে পশ্চিম বালাটারী ও কৃষ্ণনন্দবকশী গ্রামে ঢুকে পড়ে। বারোমাসিয়া নদীর পাড়ে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে কৃষক সামছুল আলম তার তামাকক্ষেত ও গরু দেখার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় ১০-১২ জনের বিএসএফ দল বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দাঁড়িয়ে থাকা সামছুল আলমকে দেখে তার মাথা বরাবর বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করলে সামছুল আলম বিএএসফের বন্দুক দুই হাত দিয়ে ধরে ফেলেন। এরপর অপর বিএসএফ সদস্যরা সামছুল আলমকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করে।