কুষ্টিয়ায় নদীগর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় প্রা.বিদ্যালয় নদীগর্ভে ।
পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে অবস্থিত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। গেলো ২০ বছর ধরে ভাঙছে বিদ্যালয় এলাকার নদীপাড়। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আবারও শুরু হয়েছে ভাঙন। এতে খেলার মাঠসহ বর্তমান ভবনটিও হুমকিতে পড়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে নদীপাড়ে পাকা বাঁধ নির্মাণ বা বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ।
তারা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীপাড় ভেঙে চলেছে। তবুও ভাঙনরোধে প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। এতে হুমকিতে পড়েছে বিদ্যালয়টি। ভাঙনের কারণে বিদ্যালয়টিতে দিনদিন কমছে শিক্ষার্থী ভর্তি ও উপস্থিতি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মমতাজ পারভীন বলেন, তিনি বিদ্যালয়টি তদারকি করেন। নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের খুব কাছাকাছি চলে এ সেছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়াসহ বিদ্যালয়টি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করার জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে আসছেন।
জানা গেছে, পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে ১৯৬৬ সালে প্রায় তিন বিঘা জমির ওপর চর ঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এটিই চর সাদিপুর ইউনিয়নের প্রথম বিদ্যালয়। প্রায় ২০ বছর ধরে নদীপাড়ের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ ভেঙে গেছে। এতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের প্রথম পাকা ভবন, খেলার মাঠ, মসজিদ, কয়েকশ বিঘা কৃষিজমি ও বসতভিটা। দুই হাজার সালে বিদ্যালয়ের ভবন পুনর্নির্মাণ করা হয়।
তবে ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে বিদ্যালয়টি নদীর কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের চারিদিকে থৈথৈ পানি থাকে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এতে আতঙ্কে গেলো ১০ বছর ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হারও কমেছে। আবার ভর্তি হলেও উপস্থিতি কম হয়। একসময় বিদ্যালয়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১১৬ জন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয় ভবনটির সামনে প্রায় ১০ ফুট দূরে পদ্মা নদীর কোল। ভবনের পশ্চিম ও পূর্বে প্রায় ২০০ ফিট দূরে পদ্মা নদীর কোলে ন তুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভবনের পেছনে উত্তর দিকে প্রায় ৫০০ ফিট দূরে নদীর আরও একটি মরা কোল, যা বর্ষায় প্লাবিত থাকে। বিদ্যালয়ের সংকীর্ণ মাঠে খেলা করছে শিক্ষার্থীরা। অসুস্থতাজনিত কারণে আসেননি প্রধান শিক্ষক।
এসময় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী হুমাইরা মিম বলে, খেলার মাঠ খুবই ছোট। অনেক সময় খেলার সামগ্রী ও শিক্ষার্থীরা নদীতে পড়ে যায়। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
আরেক ছাত্র নাইম হোসেন বলেন, পানিতে ডুবে যাওয়া ও ভেঙে পড়ার আতঙ্কে অনেকেই বিদ্যালয়ে আসে না। ভর্তিও হতে চায় না। ভাঙনরোধে তারা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানায়।
সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্তমান ভবনটিও নদীর কাছাকাছি। খেলার মাঠ নেই। এসব কারণে দিনদিন বিদ্যালয়টি ধ্বংসের পথে। কমেছে শিক্ষার্থীর ভর্তি ও উপস্থিতি। সেদিন উপস্থিতি মাত্র ৮৫ জন। তার ভাষ্য, অতীতে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতো।
নদীগর্ভে ‘বিলীনের অপেক্ষায়’ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ।
আলাউদ্দিন কাদের নামে আরেক শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের দুইপাশেই পদ্মা নদীর কোল। ভাঙন লেগেই থাকে। বিদ্যালয়টি রক্ষার্থে নদী শাসনের মাধ্যমে পাকা বাঁধ নির্মাণ অথবা স্থানান্তর করার দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, গত ২০ দিন ধরে নদীরপাড় ভেঙেই চলেছে। এর আগে ভাঙনে মসজিদ ও বিদ্যালয়ের একটি ভবন পানিতে চলে গেছে। আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। কিন্তু কর্তাদের কোনো নজরদারি নেই।
চর সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ( ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মেছের আলী খাঁ বলেন, নদীর কারণে তার ইউনিয়নের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার শেষ নেই। ঘোষপুর বাজার এলাকায় জায়গা আছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, নদী ভাঙনের কারণে চর সাদিপুর একটি প্রত্যন্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।