কুষ্টিয়ায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
হৃদয় রায়হান কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়ায় মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে শহরজুড়ে লতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছুঁয়েছে কুষ্টিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
এদিকে একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন অফিস আদালত চত্বরসহ শহর এবং শহরতলীর বিভিন্ন সড়কে হাঁটুপানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পথচারীসহ মানুষের।
কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কুমারখালী অফিসের টিপিও বাবলু রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ বুধবার বিকেল তিনটা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এর আগে গত আগস্ট মাসে দুই দিন ৭৫ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
বুধবার রাত থেকে কুষ্টিয়া জেলায় এক কথায় বলা যায় অবিরত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোনো সময় হালকা আবার কোনো সময় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। একটানা বৃষ্টিপাতের কারণে শহরের কলেজ মোড়, র্যাব গলি, অর্জুন দাস আগরওয়ালা সড়ক, কাটাইখানা মোড়, কোর্টপাড়া, সদর হাসপাতালের সামনের সড়ক, জামতলা মোড়সহ পৌরসভার আওতাধীন বেশ কয়েকটি এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌর এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
একটানা বৃষ্টির কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি আদালত চত্বর, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল চত্বরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অফিস আদালত চত্বরে হাঁটুপানি জমে মারাত্মক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, একটানা বৃষ্টিপাত নয়, একটু বৃষ্টি হলেই কুষ্টিয়া শহরে হাঁটুপানি জমে গিয়ে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। পৌর বাসিন্দারা বলছেন, সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক পরিণত হচ্ছে সমুদ্রে। পৌর কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণ করলেও পানি নিষ্কাশনে সঠিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় তা কোনো কাজে আসছে না। জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি আমরা। কিছু কিছু জায়গায় নালাগুলোতে পলিমাটি পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। নালার ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে সড়কে উঠে আসছে। এছাড়াও ভারী বৃষ্টি হলে নালার নোংরা পানি সড়কের পাশের বাড়ি-ঘরেও ঢুকে পড়ছে।
শহরের কোর্টপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই শহরের কাজী নজরুল ইসলাম, কলেজ মোড়, র্যাব গলিসহ শহরের বিভিন্ন সড়ক এমনকি ছোট বড় হাট-বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি উঠে যাচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। বাসা বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ছে।
আমলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা সোহেল রহমান বলেন, প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে পৌরসভা নালা সংস্কারসহ ড্রেন নির্মাণ করছে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনামাফিক ড্রেন নির্মাণ না হওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাচ্ছে সড়কে। আর এতেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এরমধ্যে সামান্য বৃষ্টি হলেই রিকশা ও অটোরিকশার চালকরা ২০ টাকার ভাড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা দাবি করছেন।
কুষ্টিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটু বৃষ্টি হলেই কুষ্টিয়া শহরে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সঠিক পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ করা দরকার।
কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, নালাগুলো বহু আগে পরিকল্পনা করে নির্মাণ করা। যে কারণে বর্তমান সময়ে এসে তা আর কাজে আসছে না। এছাড়া অবৈধ দখলদারদের জন্য নালার মুখ কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে পানি বের হতে না পেরে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা করে কাজগুলো করা হলে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এই জলবদ্ধতার সমস্যা নিরূপণ হবে বলে আশা করছি।