কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।। তবে কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপরতা বেড়েছে! এমন ভাবনা এখন ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়া জেলার সীমান্ত লাগোয়া বৈচিত্র্যময় জনবসতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের উপজেলা দৌলতপুরের মানুষের মধ্যে। প্রায় ৫শ’ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলাটি দেশের অনেক জেলার প্রায় সমান-সমান। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অন্যান্য লোকালয়ের মতো এখানেও বেপরোয়া চলে আসছে অস্ত্র-মাদক ব্যবসা ও নানা অপরাধ প্রবণতা। চলতি বছর জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলন ও পরিবর্তিত সরকারে দীর্ঘদিনের বরফ গলেছে মানুষের নতুন করে ভাবনার। মানুষের মধ্যে প্রবণতা বেড়েছে নাগরিক অধিকার আদায় করে নেয়ার, প্রবণতা বেড়েছে ন্যায্য কথা বলারও। বিপরীতে নড়েচড়ে বসেছে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সকল দপ্তর ও দাপ্তরিক দায়িত্বশীলরাও। সেই ধারায় সবার প্রচেষ্টা যেন সুন্দর বাংলাদেশের, নিরাপদ একখণ্ড দৌলতপুরের। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ৮ লাখ অনুমেয়। সেই হিসাবে প্রতি বর্গকিলোমিটারে উপজেলাটিতে বসবাস করেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ। ১৪টি ইউনিয়নের নানা শ্রেণী-পেশার কয়েকশো মানুষের সাথে কথা বলে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে এমন মন্তব্যই জানা গেছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পলায়নের পর দেশে নানা ঘটনাক্রমে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে জননিরাপত্তা চরম ভাবে বিঘ্নিত হয়, সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে আঁধার ঘরের কালোবাজারি আর সমাজচ্যুত চোর-ছিনতাইকারীরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দেশের অন্যান্য থানার মতো কাজে ফেরে দৌলতপুর থানা পুলিশ। গত ১০ আগস্ট দৌলতপুর থানা পুলিশ কাজে ফিরলেও প্রভাব রাখতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে। পরে জেলা পুলিশ ও সকল থানায় কর্মকর্তা পরিবর্তন হলে অন্যান্য থানার মতো কর্মোদ্যম ফিরতে শুরু করে দৌলতপুরে৷ নাগরিকের আস্থা ফিরতে শুরু করে পুলিশে।
অপরাধীর বেপরোয়া হয়ে ওঠার পর দমে যেতে থাকার আগে পর্যন্ত দৌলতপুর থানা পুলিশকে চরম বেগ পেতে হয়েছে, প্রথম দিকে সেনাবাহিনী ও পরে বিজিবি এবং যৌথবাহিনীর নানামুখী সহযোগিতায় পুলিশ সাহসিকতার সাথে দৌলতপুরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে জানিয়ে দৌলতপুর কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শঃমঃ সরওয়ার বলেন, আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক উন্নত হয়েছে তবে মাদক-সন্ত্রাসে জিরো টলারেন্স বাস্তবায়ন দরকার। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে দৌলতপুর থানা পুলিশে কর্মরত সদস্যদের এখান থেকে বদলি করা প্রয়োজন, এখনও কেউ-কেউ আছে। অপরাধী সিন্ডিকেটের সাথে তাদের পুরনো আঁতাত। পুরনো স্টাফদের বদলি করা হলে দৌলতপুর থানা পুলিশের কাজে গতি বাড়বে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি দৌলতপুর উপজেলা শাখা’র সাবেক সভাপতি বিডিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী জানান, মানুষের মধ্যে অধিকার সচেতনতা বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আইনের প্রয়োগে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। কোনো শক্তির আইনের ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ কম। বিগত সরকারের তুলনায় বর্তমানে দৌলতপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ উন্নত।
দৌলতপুর ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা পুলিশের ওপর আস্থা রাখছে। দৌলতপুর থানা পুলিশ আইনশৃংখলা রক্ষায় তৎপর। বর্তমান পুলিশ বেশ সক্রিয়।
দৌলতপুর সাংবাদিক ফোরাম কুষ্টিয়া’র উপদেষ্টা স্থানীয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শাহীন মন্তব্য করেন, নবনিযুক্ত ওসি এবং ইউএনও দায়িত্বগ্রহণের পর দৌলতপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক, দৌলতপুরের শশীধরপুর গ্রামের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে পর্যাপ্ত জনবল এবং গাড়ি প্রয়োজন। মাঠে কাজ করা পুলিশের সাহস বাড়ানো দরকার। দৌলতপুর সহ জেলার সকল উপজেলাতেই ধাপেধাপে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন বলেন, আমাদের উচিত হবে পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করা, কাজে উৎসাহিত করা। রাজনীতিকদেরও উচিত নানা পরামর্শ ও তথ্য নিয়ে পুলিশের পাশে থাকা। নতুন ওসি আওয়াল কবির আসার পর পুলিশ অনেক সজাগ হয়েছে, তবে শুধু প্রধান কর্তা নয় দ্রুততার সাথে শতভাগ সদস্য পরিবর্তন দরকার।
দৌলতপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহাম্মেদ বাচ্চু মোল্লা জানান, রাজনীতির নাম ভাঙ্গিয়ে দৌলতপুরের কোথাও কোনো মাদক-সন্ত্রাস চাঁদাবাজির সুযোগ দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার জন্য আমরা সাংগঠনিক ভাবে প্রস্তুত আছি।
দৌলতপুর থানার তথ্য অনুযায়ী গত এক মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গাজা, গাজার গাছ, ফেনসিডিল ও ট্যাপেন্টা উদ্ধার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার ও একাধিক অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। দুটি ভিন্ন এলাকায় তিন খুনের ঘটনায় এজাহারভূক্ত দশ আসামিকে কারাগারে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। ৪ নারী ও ৮ নিখোঁজ শিশুকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানাভূক্ত ও নিয়মিত মিলে ১ শ’ এর বেশি আসামি আদালতে তোলা হয়েছে। দুটি ছিনতাইয়ের একটির আসামিদের সনাক্ত করে একজনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে, অন্যটি একটি আলোচিত ছিনতাইয়ের পরিকল্পিত নাটক। ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধার, বেদখল হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধারের মতো ঘটনাও রয়েছে। আছে তিনটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার।
দিনকে দিন সময় হবে সুখের থেকে সুখকর। নিরাপদ থাকবে জনপদ, এমনটাই প্রত্যাশা উপজেলাটির বাসিন্দাদের।