কেনো সরকারি স্কুলের নামে অপবাদ হচ্ছে এগুলোতে ভালো পড়ানো হয়না ? -মোস্তাফিজুর রহমান এমপি
কংকনা রায়, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক গণশিক্ষা মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ফুলবাড়ী উপজেলা কেনো শিক্ষা নগরী হয়না? কেনো এ উপজেলার মানুষকে বাহিরে গিয়ে ভালো মানের শিক্ষাগ্রহণ করতে হচ্ছে? ফুলবাড়ীর শিক্ষকদের দুর্বলতা বা দৈন্যতা কোথায়? সব শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলছি, এতো বহুতল ভবন, সুন্দর সুন্দর শ্রেণি কক্ষ থাকতেও কেনো শিক্ষার্থীরা বেশি টাকা দিয়ে কিণ্ডারগার্টেন বা ব্র্যাক স্কুলে পড়ছে? বাড়ির পাশে সরকারি স্কুল বিনামূল্যে পড়ালেখা থাকতেও কেনো সেটি ত্যাগ করে ভালো শিক্ষার জন্য বাহিরে গিয়ে প্রাইভেট স্কুলে পড়ছে? প্রাইভেট স্কুলের ও বেতনও কম, তবুও তারা কিভাবে এতোভালো মানের শিক্ষা দিচ্ছে? কেনো সরকারি স্কুলের নামে অপবাদ হচ্ছে যে, এগুলোতে ভালো পড়ানো হয়না? আপনারা কোনোরকমে টেনেটুনে নাম্বার বাড়িয়ে দিয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীকে প্রমোশন দিয়ে পরের ক্লাসে পার করে দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের দুর্বলতাটা কোথায় সেটি নিয়ে কেউ ভাবছেন না। মেধা যাচাই করছেন না। আপনারা বিদেশের শিক্ষকদের অনুসরণ করুন। তারা ছুটির দিনেও বিদ্যালয়ে বসে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিজেরা নিজ নিজ প্ল্যান করছেন ছুটির পরে কিভাবে কোন প্যাটানে পাঠদান করাবেন। অথচ আমরা তা করছি না। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবি করছি কিন্তু শিক্ষার মান ভালো করার চেষ্টা করছি না কেউ।
তিনি আরো বলেন, যারা শিক্ষক হতে চান তারাই শিক্ষক। কেনো শিক্ষার্থী পড়ালেখায় দুর্বল হলে তাকে আলাদাভাবে পড়াতে হবে। তাকে সময় দিতে হবে। তার দুর্বলতার গভীরে যেতে হবে। এটি একজন শিক্ষকদের দায়। অপরিণত করে কোনো দুর্বল শিক্ষার্থীকে পরের শ্রেণিতে এগিয়ে নেয়া যাবে না। এভাবে এগিয়ে কি হচ্ছে? তারা কি শিক্ষা পাচ্ছে? এভাবে শুধু তারা কাগজে কলমে শিক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু মেধায় শূন্য থাকছে। তারা এভাবে শিখে কোনো চাকরির পরীক্ষাতেই টিকছে না। কাজেই জাতি গঠন করার দায়িত্ব শিক্ষকদের। শিক্ষকদের মধ্যে ভাবনা আসা দরকার, যে কোথায় আমাদের দুর্বলতা আছে। সেটি যাচাই করুন। আপনারা নিজেরা বসুন আলোচনা করুন। নিজেদের দুর্বলতা খুঁজে বের করুন। আমরা আগে মাটির ঘরে পড়েছে। ছিল না বিদ্যুৎও। কিন্তু তবুও মানুষ বলে আগে শিক্ষার মান ভালো ছিল। সঠিক শিক্ষক ছিল। শিক্ষক অবহেলা করলে জাতি ধ্বংস হবে। জাতিকে মূল্যবোধের দিক দিয়ে উপড়ে উঠাতে হলে শিক্ষকদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে। ফুলবাড়ীর একটি আলাদা গুরুত্ব আছে, এটি একটু ব্যতিক্রমী যায়গা। অন্যান্য যায়গার মানুষ ফুলবাড়ীকে ঈর্শা করে। ফুলবাড়ীকে এমনভাবে শিক্ষানগরী হিসেবে গড়ে তুলুন যাতে ফুলবাড়ীর কেউ ভালো পড়ার খোঁজে বাহিরে না যায়। বরং বাহিরের মানুষ ভালো পড়ালেখার পেতে ফুলবাড়ীতে আসনে।
শনিবার (৭ অক্টোবর) দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তিন কোটি টাকা ব্যায়ে নবনির্মিত চারতলা একাডেমিক ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেছেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে নবনির্মিত ভবনের ফলক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক গণশিক্ষামন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি।
পরে বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন।
এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হাশেম, স্বাগত বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোছা. সুফিয়া সুলতানা, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরী, পৌর প্যানেল মেয়র মামুনুর রশিদ চৌধুরী, বেতদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহ মো. আব্দুল কুদ্দুস, কাজিহাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক রতন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান প্রমুখ।
এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।