কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হচ্ছেন ইনফ্লুয়েন্সার এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর এতদিন এ বিষয় নীরবতা পালন করলেও এখন কোটা আন্দোলন ইস্যুতে সক্রিয় হয়েছেন তারা। তাদের মাঝে আছেন সালমান মুক্তাদির, আয়মান সাদিক, তৌহিদ আফ্রিদি, সাকিব বিন রশিদ, সৌভিক আহমেদ, সৌমিক আহমেদ, রাশেদুজ্জামান রাকিব, এনায়েত চৌধুরী, কারিনা কায়সারসহ আরও বেশ কয়েকজন।
কেউ কেউ আবার এতদিন নিরব থাকলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং নিহতের পর এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের হ্যান্ডেল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে পোস্ট করছেন তারা।
বেশ কয়েকদিন ধরেই কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক এবং তার সহধর্মিণী মুনজেরিন শহিদ।
নিজেদের ব্যক্তিগত আইডি ও পেইজ তো বটেই, টেন মিনিট স্কুলের দাপ্তরিক পেইজ থেকেও পোস্ট করেন তারা।
গত ১৫ জুলাই কোটা আন্দোলনের সমর্থন জানিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে আয়মান লেখেন, ‘কোটা সংস্কার চাই। মেধা হোক সবচেয়ে বড় কোটা’।
অন্যদিকে গত ১৬ জুলাই নিজের ভেরিফায়েড পেইজে সালমান মুক্তাদির জানান, কোন শিক্ষার্থী হামলার শিকার হলে অথবা হলে প্রবেশ করতে না পারলে সাহায্য করবেন তিনি।
বুধবার আরেক পোস্টে দেশের অন্যান্য শিল্পীদের কোটা আন্দোলনের প্রতি নীরব ভূমিকার সমালোচনা করে আরেকটি পোস্ট করেন তিনি।
কোটা আন্দোলনের ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব উপস্থিতি নিয়ে সালমান মুক্তাদির বলেন, যৌক্তিক বিষয়কে অনেক বড় করা হয়েছে। এটা সহিংসতার দিকে যাওয়ার কথা ছিল না।
এখন বিষয়টা শুধু কোটা না, মানুষের জীবন, রক্ত আর মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে চলে গেছে। আমার ধারণা, সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়কে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হয়নি।
কোটা আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় কোন ক্ষতির আশঙ্কা করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান মুক্তাদির বলেন, আশঙ্কা তো থাকেই। টেন মিনিট স্কুলের বেলায় দেখেছি, কোটা আন্দোলনের পক্ষে কথা বলায় তাদের বিনিয়োগের প্রস্তাব বাতিল হয়েছে। তবুও আমাদের দায়িত্ব রয়েছে কথা বলার। কোটা আন্দোলনকে সমর্থন করে নিয়মিত পোস্ট করছেন বুয়েটের শিক্ষক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জনপ্রিয় মুখ এনায়েত চৌধুরী।
কোটা আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার এনায়েত চৌধুরী ফেসবুকে লেখেন, ‘আপনারা এইসব শিক্ষার্থীর গলা দাবায় রাখতে পারবেন না। সিজিপিএ একটু কমাইতে পারবেন।
কিন্তু আপনাদের দৌড় ওই পর্যন্তই। যে যেখানে ভালো করার সে পরে সেখানে নিজের কৃতিত্ব দেখাবেই, সেই ক্যানভাসে আপনি থাকেন আর নাই থাকেন’।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনগ্রসর এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা অবশ্যই প্রয়োজন। তাই কোটার যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষে আমার অবস্থান।
সরকারের ভালো কাজকে যেমন সাধুবাদ জানাই, তেমনি কোথাও অপ্রত্যাশিত কিছু হলে তার নিন্দা করাও আমাদের দায়িত্ব। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতেও আমি সরব ছিলাম।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর সাকিব বিন রশিদ কোটার যৌক্তিক সংস্কার সমর্থন করেন উল্লেখ করে বলেন, কোটার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা ও বৈষম্য দূর করা।
একটা পর্যায় পর্যন্ত প্রমাণ করা যাবে, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কারণ মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
কিন্তু এটা প্রমাণ করা যাবে না যে, মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় প্রজন্মও অনগ্রসর। আবার অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি যেমন ভারতে দলিতদের জন্য কোটা রয়েছে, তাদের মতো এখানে যারা আছে তাদের জন্য কোটা থাকতে পারে।
কোটা একেবারেই বাতিল না বরং যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষে আমি।
কোটা আন্দোলনে ইস্যুতে এতদিন নিরব থাকলেও অবশেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে পোস্ট করেছেন আরেক জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদি।
বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজের কাভারে আবু সাঈদের ছবি প্রকাশ করেন তিনি।
সন্ধ্যা ৬টায় আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, আমি দুঃখিত যে আমি দেরি করে ফেলেছি এই বিষয়ে কথা বলতে। আমাকে আপনারা অনুগ্রহ করে আবু সাঈদ ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দিন।
আমি এককভাবে তার পরিবার এর পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি আসছি আপনাদের সাথে যোগ দিতে। আপনাদের সাথে এক হয়ে মাঠে নামব। আর নয় রক্তক্ষরণ। শান্তি চাই, শান্তি চাই।