উচ্চ ফলনশীল ধান আবিস্কারের সুফল হোঁচট খাচ্ছে, জাত পৃথক না করেই চাল করছে অটোরাইসমিলগুলো ।
অটোরাইস মিলগুলো ধানের জাত পৃথক না করেই চাল করছে। মিলগুলো সব প্রজাতির ধানই এক সাথে ভেঙে চাল করছে। এতে ধানের গুণগত মান নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মোটা-চিকন ধানের গুণগত রকম ভেদ থাকলে পৃথকভাবে ধান না ভাঙায় কোন জাতের ধানের চাল খাচ্ছেন ভোক্তারা তা জানে না কেউ।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউটের বিজ্ঞানিরা উন্নত প্রজাতির ধান আবিস্কার করলেও পৃথকভাবে ধান থেকে চাল করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বিজ্ঞানিদের আবিস্কার মাঠেই পরে থাকছে। সাধারণ জনগণ উচ্চ ফলনশীল, গুণগত মানের ধান থেকে মাড়াই করা চাল হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভোক্তারা বুঝতেই পারছেনা তারা কোন জাতের ধানের চাল খাচ্ছেন- এমন অভিযোগ ভোক্তাদের। এছাড়া সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে- চালের বস্তায় জাত লিখতে হবে। সেই নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে দেড় শতাধিক প্রজাতির ধান আবাদ হয় বিভিন্ন মৌসুমে। বর্তমানে এই অঞ্চলে উৎপাদিত ধানের ৬০ শতাংশই হাইব্রিড জাতীয়। অথচ বাজারে গেলে ব্রি-২৮, পাইজাম, নাজিরশাইল, মিনিকেটসহ আরও দুইএকটি জাত ছাড়া অন্য প্রকার ধানের চাল পাওয়া যায় না। ধান থেকে যখন চাল করা হয় তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮/১০ প্রজাতির ধান একত্রে করে চাল করা হচ্ছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত অটোরাইস মিলগুলোতে যখন ধান ভাঙা হয় তখন ঘর্ষণে এমনিতেই ধানের গুণগত মান অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। আটোরাইস মিল মালিকরা ধানের মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গ্রাম-গঞ্জে দালাল ফরিয়া নিয়োগ করে। এরা মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ধান সংগ্রহ করছে ঠিকই, কিন্তু পৃথকজাত পৃথকভাবে না ভাঙানোর ফলে অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ ধানের চাল থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ১২ মিশেলি ধানের চাল একদিকে যেমন সঠিক মান ধরে রাখতে পারছে না অপরদিকে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে না।
জানাগেছে, একটি অটো রাইস মিলে প্রতিদিন গড়ে ২০০ /২৫০ মেটিক টন ধান লাগে। এর মধ্যে শুধু চিকন ও মোটা বাছাই করা হয়। কিন্তু কোনটা কোন জাতের তা পার্থক্য করা হয় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, অটোরাইস মিল মালিকরা জাত পৃথক না করে ধান থেকে চাল তৈরী করছে। ফলে কৃষি গবেষণার আবিস্কৃত ধানের গুণগত মানের চালের পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে না। এক সাথে বেশ কয়েক প্রজাতির ধান থেকে চাল করায় সরকারের খাদ্য নিরাপত্তার পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সাথে জনগণ কোন ধানের চাল খাচ্ছে এটা বুঝতে পারছেনা।