ক্ষমতাসীনরা নাশকতা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছেঃ রিজভী । তারা সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চালাচ্ছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, জেলা কোথাও কাউকে বাদ দিচ্ছে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমান সরকারের নেতারা অহর্নিশ কথা বলে যাচ্ছে। কারণ সংবাদমাধ্যম তো তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারাই নাশকতা ঘটিয়ে গণবিরোধী কর্মকাণ্ড করে বিএনপি ও গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে একচেটিয়া প্রচারণা চালাচ্ছে। অনেক গণমাধ্যমকে জোর করে হুমকি দিয়ে সরকারের কথা প্রচারের নির্দেশ দিচ্ছে। তাদের সকল নাশকতা ও অপর্কম সবকিছু জনগণের ওপর নামিয়ে এনেছে। সেই লক্ষ্যে এখন তারা সারাদেশে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চালাচ্ছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, জেলা কোথাও কাউকে বাদ দিচ্ছে না। কাউকে না পেলে পরিবারের সদস্যদেরকে ভয়- ভীতি দেখানো হচ্ছে। যাদেরকে ধরা হচ্ছে তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। যেন উৎপীড়নের ভয়ঙ্কর কাঠামো তারা তৈরি করেছে।
নানাভাবে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তৃতীয় দফার অবরোধ কর্মসূচি প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা ও মালিকানা ফিরিয়ে আনা ও দেশ থেকে অনাচার দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য আবারও ৮ ও ৯ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার টানা অবরোধ ঘোষণা করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীসহ সকলকে এই স্বৈরশাহীর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের অতীত ঐতিহ্য হচ্ছে নিরন্তর লড়াই-সংগ্রাম করা।
তিনি বলেন, আজকে ক্ষমতাসীনরা কখনোই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জনগণের মতামতে বিশ্বাস করে না। তারা প্রথমেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করে। আবারও দেশে নতুন কায়দায় বাকশাল কায়েম করা হয়েছে। আজও তারা দেশে পরিকল্পিতভাবে নাশকতার ছক তৈরি করে। অন্যদিকে যার বিপুল জনসমর্থন রয়েছে তাকে এ ধরনের নাশকতা করতে হয় না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিএনপির মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়। এসব দেখেই ক্ষমতাসীন স্বৈরশাহী পুলিশ, ছাত্রলীগকে দিয়ে নাশকতা করে বিপুল মানুষের জমায়েতকে নস্যাৎ করার কাজে লাগিয়েছে। এটা গোটা বিশ্বের মানুষ দেখেছে। কত ভয়ঙ্কর ও সর্বনাশা দল হতে পারে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে হয় বিরোধী মত দমনে কাজ করছেন। অথচ তাদের অস্ত্র, গুলি সবকিছুই তো জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। জনগণকে ভয় পাইয়ে দিতে এবং একতরফা নির্বাচন করতেই আজকে তারা কাজ করছে। এক্ষেত্রে টার্গেট করা হয়েছে তরুণদেরকে।
রিজভী বলেন, আজকে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এতো উৎপীড়নের মধ্যেও রাজপথে নেমে এসেছে। যারা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি পালন করছে। কারণ দেশের মানুষ গণতন্ত্র বঞ্চিত, দেশের মালিকানা থেকে বঞ্চিত। তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ ও জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
তিনি বলেন, সবাই শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন। সকলের শান্তিতে থাকার জন্যই আমাদের এই অবরোধ কর্মসূচি। যেখানেই বাধা আসবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়তে হবে। আমরা জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে মাঠে আছি। এটা ছাড়া কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। নয়তো দেশ ছাড়তে হবে। নয়তো দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে প্রজা হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু দেশের মানুষের ইতিহাস তারা কখনো এভাবে থাকেনি। এখানে ফকির বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ, সাঁওতাল আন্দোলন হয়েছে। এ ধরনের বিপ্লব আমাদেরকে আজও অনুপ্রাণিত করছে। সুতরাং জনগণ আবারও নির্ধারণ করবে কে হবেন দেশের শাসক?
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের গ্রেপ্তার, হামলা-মামলার চিত্র তুলে ধরে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৯৬ জন নেতাকর্মী। মামলা হয়েছে ১৬টি। এসব মামলার আসামি করা হয়েছে ১৭২৮ জনের অধিক নেতা কর্মীকে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৪৮ জনের অধিক নেতাকর্মী। তিনি জানান, গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৪/৫ দিন পূর্ব থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত মোট গ্রেফতার ৬০৫৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ১৪৮টির অধিক, মোট আহত ৩৫৬৬ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মৃত্যু ১১ জন (সাংবাদিক ১ জন)/।