মনির হোসেন, বেনাপোল প্রতিনিধি :-শুধু বসন্তে না, ১২ মাস ফুল ফোটে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী এলাকায়। কিন্তু বর্ষাকালে সেই ফুলের দাম না থাকায় গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্ষেত থেকে উঠিয়ে যে দামে ফুল বিক্রি হয় তাতে শ্রমিকের খরচ না উঠায় চাষিরা ফুল গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্ত এ বছর বর্ষা মৌসুমে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাজারে আশানুরূপ দাম থাকলেও খেতে ফুল নেই।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার দেখা গেছে, ফুলের রাজধানী গদখালীর অদূরে হাড়িয়া, সৈয়দপাড়া, পটুয়াপাড়া ও ফুলকানন পানিসারা মাঠে কোনো ক্ষেতের গাছে ফুল নেই। ফুলচাষিদের দাবি এ বছর মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অধিকাংশ ফুলক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার বর্ষাকালেও বৃষ্টির দেখা নেই। এতে করে ফুল গাছ মরে যাচ্ছে।
পানিসারা মাঠে কথা হয় ফুলচাষি আজিজুর রহমান সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে মাঠের অধিকাংশ ফুলক্ষেত পুড়ে গেছে। আবার এখন বৃষ্টি হচ্ছে না তেমন, মাঝে-মধ্যে ভ্যাপসা গরম পড়ছে, এতে করে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হচ্ছে। তবে এসবের মধ্যেও খুশির সংবাদ হলো এ বছর ফুল আর গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে না। তুলনামূলক ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর আমার ছয়বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, দেশি গোলাপ, চায়না গোলাপ, জারবেরা ও গাঁদা ফুলের চাষ রয়েছে। আগামী মৌসুম উপলক্ষে যে দেশি ও চায়না গোলাপ ফুলের চাষ করেছি, তাতে মোটামুটি ফুল এসেছে, তা প্রতিদিন উঠাচ্ছি।
শাহিন আহম্মেদ বলেন, ঈদের পরে গত ১০ দিনে গোলাপ ও জারবেরা ফুল বিক্রি করেছি প্রায় দেড় লাখ টাকার। যা অন্য বছর এ সময়ে এমন দাম কল্পনাই করা যেতো না।
শনিবার সকালে গদখালী ফুলবাজারে দেখা গেছে, গোলাপ ফুলের শ’ বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। চায়না গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে শ’। রজনীগন্ধা একেকটি বিক্রি হয়েছে দেড় থেকে দুই টাকায়, আর জারবেরা বিক্রি হয়েছে সাত থেকে আট টাকায়, গাঁদা ফুলের দাম ছিল ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা হাজার।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনা ভাইরাসের দুই বছরের লকডাউন, আম্ফান ঘূর্ণিঝড় ও অসময়ে বৃষ্টিতে ফুলচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এসব কাটিয়ে উঠার বছর খানেক পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় ফুলচাষিরা আবার ক্ষতির মুখে পড়েন। তবে বর্ষা মৌসুমে ক্ষেতে ফুল না থাকলেও যে দাম পাচ্ছেন তাতে, অনেকটা পিঠ বাঁচানোর মতো অবস্থা।
উল্লেখ্য, ঝিকরগাছার গদখালী অঞ্চলে এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। এ এলাকার ছয় হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর ৩৫০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদিত হয় এ অঞ্চলে।