গর্ভকালীন প্যানিক অ্যাটাক যা বলছেন ডাক্তার » Daily Bogra Times
প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ৩:৫০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২১, ২০২৩, ৯:২০ এ.এম
গর্ভকালীন প্যানিক অ্যাটাক যা বলছেন ডাক্তার
গর্ভকালীন প্যানিক অ্যাটাক যা বলছেন ডাক্তার।
গর্ভকালীন প্যানিক অ্যাটাকে মায়ের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রূণেরও ক্ষতি হয়। যেমন নবজাতকের ওজন কমে যাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণ, মাথার গঠন ছোট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিকভাবেও শিশু ভবিষ্যতে কষ্ট করতে পারে।
গর্ভকালে নারীদের প্যানিক অ্যাটাক হয়ে থাকে। এটি অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার বা দুশ্চিন্তাজনিত ব্যাধির অন্তর্ভুক্ত।
প্যানিক অ্যাটাক কিন্তু বেশিক্ষণ থাকে না, মিনিট কয়েক মাত্র এর ব্যাপ্তি। এতে আক্রান্ত হলে সাংঘাতিক দুশ্চিন্তা ও ভয় হয়, মনে হয় আপনি পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন। মনে হবে, আপনি এবার হয় মারা যাবেন, নয়তো পাগল হয়ে যাবেন। যে পরিস্থিতিতে এটি হয় সচরাচর সেখান থেকে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্যানিকের অনুভূতি অত্যন্ত তীব্র, কিন্তু ক্ষণস্থায়ী। এটি কেটে গেলে আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন। প্যানিক যতই ভয়প্রদ হোক না কেন, এতে শারীরিক কোনো ক্ষতি হবে না এবং নিজে থেকেই এটি কমে যায়। তবে কখনো প্যানিক অ্যাটাক গর্ভাবস্থায় প্রভাব বিস্তার করে আবার কখনো গর্ভাবস্থা প্যানিক অ্যাটাকে প্রভাব বিস্তার করে বা করতে পারে। পৃথিবীতে ১০ শতাংশ নারী গর্ভকালীন প্যানিক অ্যাটাকে ভোগেন।
এর লক্ষণ ও উপসর্গ গর্ভবিহীন সময়ের মতোই। কেউ কেউ মনে করেন, তাঁর হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। আবার কেউ মনে করেন, তিনি মারা যাচ্ছেন। যেসব নারীর গর্ভধারণের আগে প্যানিক অ্যাটাকের ইতিহাস আছে, তাঁদের গর্ভকালে এই ভোগান্তি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আবার এমনটিও হতে পারে, যিনি জীবনে কোনো দিন প্যানিক অ্যাটাকে ভোগেননি, তিনিও এতে ভুগছেন গর্ভাবস্থায়। অবশ্য কারও কারও দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্যানিক অ্যাটাক কমে গেছে।
গর্ভাবস্থায় প্যানিক অ্যাটাকের কারণ ⊲ ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দুশ্চিন্তা। ⊲ মানসিক চাপ। ⊲ মানসিক চাপের প্রতি স্পর্শকাতরতা। ⊲ বড় আঘাত। ⊲ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
গবেষণা বলছে, গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের মাত্রার তারতম্যের জন্য প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে জেনেটিকভাবে প্যানিক অ্যাটাকে ভোগার প্রবণতা আছে; বিশেষ করে যদি আগে গর্ভপাতের ইতিহাস থাকে বা ঘুমের সমস্যা থাকে, সেগুলো প্যানিক অ্যাটাকের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। সেই সঙ্গে অর্থকষ্ট বা পারিবারিক আন্তসম্পর্কের দুর্বলতাও প্যানিক অ্যাটাক তৈরি করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কীভাবে প্যানিক অ্যাটাক সামাল দেবেন
চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। সাধারণত আমাদের দেশে উপদেশ দেওয়ার লোকের অভাব নেই। ফলে কারও কোনো কথা না শুনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় সব ধরনের ওষুধ খাওয়া যায় না। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের ধরন ও পরিমাপ নির্দিষ্ট করে খেতে হবে।
সাইকোথেরাপিস্টের শরণাপন্ন হোন। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সময় বেশি লাগবে। অল্প সময়ে জাদুকরি কোনো পরিবর্তন আসবে না। তাই ধৈর্য ধরে সেশনগুলো করতে হবে।
রিলাক্সেশন বা শিথিলায়ন পদ্ধতি অবলম্বন করুন। অনলাইনে খুঁজলে পাবেন ডিপ ব্রিদিং টেকনিক, প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন, গাইডেড ভিজুয়ালাইজেশন, মাইন্ডফুল এক্সারসাইজ, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, নিজের মনের কথাগুলো কাগজে লেখা ইত্যাদি ধরনের পদ্ধতি। সেখান থেকে বেছে নিতে পারেন আপনার কোনটি ভালো লাগছে। তবে কঠিন কোনো পদ্ধতি অবলম্বনের আগে সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
নিজের যত্নে বাড়তি সময় দিন। গর্ভকাল প্রতিটি নারীর জীবনে এক বিশেষ মুহূর্ত। এ সময় বেশি যত্ন নারীর মৌলিক অধিকার। নিজের যত্ন নেওয়া মানেই স্বার্থপরতা নয়। নিজের জন্য ব্যায়ামের সময়, বাড়তি বিশ্রাম, বাড়তি খাবার, বাড়তি ঘুম, চাপমুক্ত থাকার অবস্থা ইত্যাদি নিজ দায়িত্বে বের বা তৈরি করে নিতে হবে।
পছন্দমতো সাহায্যকারী খুঁজে রাখুন। তিনি হতে পারেন আপনার বন্ধু বা পরিবারের কেউ। প্যানিক অ্যাটাক শুরু হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ওই সময়ে নির্দিষ্ট একজনের সহায়তা আপনার জন্য জরুরি হতে পারে।
প্যানিক অ্যাটাক কিন্তু সন্তান জন্মদানের পরপর শেষ হয়ে যাবে না। তারপর ঘুমের কষ্ট এবং আরও নতুন নতুন ঝামেলার মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে। কাজেই প্রসব-পরবর্তী একটি পরিকল্পনা করে নিজের বিষণ্নতা, হতাশা, অসম্পূর্ণতা ইত্যাদি অনুভূতিকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ সন্তান জন্মদানের পরে দুশ্চিন্তার প্রকোপ বেড়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে, যেটাকে পোস্ট পারটাম ডিপ্রেশন বলা হয়।
গর্ভাবস্থায় চা বা কফি ইত্যাদি ক্যাফেইন-জাতীয় উত্তেজক পানীয় এড়িয়ে চলুন। এতে সন্তানের ওজন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই কোনো কারণ ছাড়াই মাঝেমধ্যে ভয়ংকর নিঃসঙ্গতা বা প্যানিক অ্যাটাকে ভোগেন। একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তাঁদের মায়েরা গর্ভকালীন মনোদৈহিক ও মনোসামাজিকভাবে ভালো ছিলেন না। সেই ছাপ সন্তান হিসেবে তাঁর জীবনেও পড়েছে//।
অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনা