ডিমলা (নীলফামারী)ঃ ঘন কুয়াশা-হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত উত্তরের জনপদ নীলফামারীর ভারতীয় সীমান্তবর্তী ডিমলা উপজেলায় মানুষের জীবন। বৃষ্টির মত পড়ছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি হিমেল হাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছে মহাবিপদে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাহিরে বের হচ্ছেন না। গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। অপরদিকে হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।
ডিমলা উপজেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারি) তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে শীতের অনুভূতি বেশি হচ্ছে। আজ সারাদিন পেরিয়ে গেলেও ডিমলায় সূর্যের আলোর দেখা মেলেনি।
উপজেলা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল সবুর কালবেলাকে বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আগামীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, সীমান্তবর্তী তিস্তা নদী বেষ্টিত এ উপজেলায় মাঘ মাসের শুরু থেকে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় আর হিমেল হাওয়ার শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষজন নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন করছে। সড়কপথে লোকজনের চলাচল একবারেই সীমিত। এমনকি ভর দুপুরেও সড়ক-মহাসড়ক পথে যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে। নিতান্ত প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষেরই কেবল দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া মানুষজন। এছাড়া তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের মানুষজন পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দুর্যোগ বেড়েছে দিনমজুর, শিশু, বয়স্ক ও ছিন্নমূল মানুষের।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নের চর খরিবাড়ি গ্রামের দিনমজুর পলাশ ভাটিয়া বলেন, পরিবার নিয়ে এই শীতে কষ্টে আছি। ইউনিয়ন পরিষদ গিয়েছিলাম কম্বলের জন্য। চেয়ারম্যান বলছেন কম্বল নেই। যা পেয়েছিলাম সেইগুলোর বিতরণ শেষ হয়ে গেছে।
গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ফুটানি হাট এলাকার অটোভ্যান চালক জুলহাস মিয়া বলেন, যতই শীত আর কুয়াশা আসুক, পেটের তাগিদে আমাদেরকে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের হতেই হয়। ঠাণ্ডায় মানুষ বের হচ্ছেন না, তাই যাত্রী পাচ্ছিনা।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, শীতজনিত রোগে বর্হিবিভাগে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসা প্রদান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি শিশু ও বৃদ্ধ রোগীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বলেন, এই শীতে উপজেলায় ছিন্নমূল, অসহায়, দুস্থ ও এতিমখানার শিশুদের মাঝে ৫ হাজার ৫০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো কম্বলের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।