বিনোদন ডেস্কঃ- ‘টুয়েলভথ ফেল’ কি শুধু আমাদের বিসিএস ক্যাডার হতে শেখায়। একজন ফেসবুকে লিখেছেন, প্রতি রিফ্রেশে ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমা নিয়ে ১০টা করে ‘থিসিস পেপার’ আসছে।
বোঝাই যাচ্ছে, বলিউডের এই সিনেমা নিয়ে ফেসবুকে তুমুল আলোচনা চলছে। এই আলোচনাকে মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ যায়। আন্তরিক ও ঠাট্টাচ্ছলের।
আন্তরিক আলোচকেরা সিনেমার গল্প, নির্মাণ, কুশীলবদের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘টুয়েলভথ ফেল’ ২০২৩ সালের সেরা সিনেমা। এমন সিনেমা আরও হওয়া দরকার।
অন্য পক্ষ (ঠাট্টাকারী) অবশ্য এসব গুরুগম্ভীর আলোচনার মধ্যে নেই। বাস্তবজীবনের গল্পে নির্মিত এই সিনেমায় তাঁরা খুঁজে নিচ্ছেন ঠাট্টা, রসিকতা বা খোঁচা মারার নানান অনুষঙ্গ।
সিনেমাটি নিয়ে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যে আলোচনা, তার একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে ‘বিসিএস পরীক্ষা’। যেমন বলা হচ্ছে, এই সিনেমা শুধু বিসিএস ক্যাডার হতে শেখায়।
এই কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে কেউ বলছেন, সিনেমার মতো এমন ‘সাপোর্টিভ গার্লফ্রেন্ড’ (শ্রদ্ধা জোশি) থাকলে প্রথম চেষ্টাতেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া সম্ভব।
সম্পূরক হিসেবে কেউ কেউ বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য সিনেমায় দেখানো জনৈক বড় ভাইয়ের (গৌরী ভাইয়া) অকুণ্ঠ সাহায্য-সহযোগিতার প্রসঙ্গ টানছেন। বলেছেন, এমন ‘বড় ভাই’ থাকলে বিসিএস-জয় ব্যাপারই না।
বিধু বিনোদ চোপড়া নির্মিত সিনেমাটি গত বছরের ২৭ অক্টোবর ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মাত্র ২০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত সিনেমাটি নিয়ে তখন খোদ ভারতেও খুব বেশি হইচই লক্ষ করা যায়নি।
গত ২৯ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টারে মুক্তি পাওয়ার পরই মূলত সিনেমাটি নিয়ে তুমুল চর্চার সূত্রপাত। বিশেষ করে কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশি তরুণ নেটিজেনদের মুখ্য আলোচ্য বিষয় এই সিনেমা।
সিনেমাটি দেখে বাংলাদেশের অনেকেই ফেসবুকে ছোট-বড় ‘রিভিউ’ দিচ্ছেন। আসলে সিনেমাটি এমনই যে, তা দেখার পর প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে পারা যায় না। হোক সে প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক, নেতিবাচক বা ঠাট্টার।
বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর মধ্যে সিনেমাটি যে দারুণভাবে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সিনেমার গল্পের মূল উপজীব্য।
ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের (আইপিএস) কর্মকর্তা মনোজ কুমার শর্মার জীবনের গল্প নিয়ে ২০১৯ সালে ‘টুয়েলভথ ফেল’ নামের একটি উপন্যাস লেখেন ভারতীয় ঔপন্যাসিক অনুরাগ পাঠক। এই উপন্যাস অবলম্বনেই সিনেমা বানিয়েছেন বিধু।
ভারতে তুমুল প্রতিযোগিতার ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) পরীক্ষা দিয়ে আইপিএস কর্মকর্তা হতে হয়। ভারতের কোটি কোটি তরুণের কাছে ইউপিএসসির চাকরি ‘সোনার হরিণ’।
ভারতের এক প্রত্যন্ত এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে মনোজের নানা চড়াই-উতরাই, বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে কঠিন সংগ্রাম করে আইপিএস কর্মকর্তা হওয়ার গল্প নিয়ে এই সিনেমা।
ভারতে ইউপিএসসি যেমন, বাংলাদেশে তেমন বিসিএস। পুলিশসহ বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে চাকরি পেতে বাংলাদেশের লাখো তরুণ দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় করে থাকেন।
মনোজের সংগ্রামের মতো অনেক গল্প বাংলাদেশেও খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষে করে বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর এমন সব সংগ্রাম, অনুপ্রেরণার গল্প গণমাধ্যমে আসতে দেখা যায়।
বাংলাদেশের তরুণেরা ইউপিএসসির সঙ্গে বিসিএস পরীক্ষায় বসার অভিজ্ঞতার নানা মিল ‘টুয়েলভথ ফেল’ সিনেমাটিতে খুঁজে পেয়েছেন বলে ধারণা করি। সম্ভবত এ কারণেই সিনেমাটি তাঁদের বেশি মনোযোগ কেড়েছে।
তবে ‘টুয়েলভথ ফেল’ আমাদের শুধু বিসিএস ক্যাডার হতে শেখায় না। আরও অনেক বড় শিক্ষণীয় বিষয় আছে এই সিনেমায়।
আমরা এই সিনেমা থেকে সততার শিক্ষা নিতে পারি। সিনেমায় মনোজের বাবা ও দাদিকে সৎ হিসেবে দেখানো হয়। এক ঘুষখোর কর্মকর্তাকে জুতা মেরে কেরানির পদ থেকে বরখাস্ত পর্যন্ত হন মনোজের বাবা।
মনোজদের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘নকল-উৎসব’ চলে আসছিল। এই নকল প্রথা বন্ধ করে দেন এলাকাটিতে নতুন বদলি হয়ে আসা পুলিশের এক কর্মকর্তা (ডিএসপি দুষ্যন্ত সিং)। ফলে দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় মনোজসহ সবাই ফেল করেন। একপর্যায়ে মনোজ এই ডিএসপির মতো পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার উপায় জানতে চান।