1. dailybogratimes@gmail.com : admin :
ডিমলায় কাঠের সাঁকোই যেন দশ গ্রামের মানুষের ভরসা  - Daily Bogra Times
শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন

ডিমলায় কাঠের সাঁকোই যেন দশ গ্রামের মানুষের ভরসা 

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)ঃ
  • আপডেট সময়ঃ শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২৪ Time View
ডিমলায় কাঠের সাঁকোই যেন দশ গ্রামের মানুষের ভরসা 
print news

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)ঃ  নীলফামারীর ডিমলায় পারাপারের জন্য দশ গ্রামের লোকজনের জন্য কাঠের সাঁকোই এক মাত্র ভরসা। গত ৮ বছর ধরে একটি ব্রিজ তৈরির স্বপ্ন দেখছেন এলাকাবাসি। নিজেদের উদ্যেগে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন ছোট একটি খাল  পারাপার করছেন হাজারো মানুষ। 

সরেজমিনে উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ঝারসিংহেশ্বর ও খগারচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদীবেষ্টিত বাঁধের রাস্তার পাশে প্রায় দুই/আড়াই হাজারেরও বেশি পরিবার বাস করে আসছে। এলাকাবাসি নিজেরাই চাঁদা তুলে বাঁশ, কাঠ সংগ্রহ করে পর্যায়ক্রমে বাঁশ ও কাঠের সাঁকো (পুল) নির্মাণ করে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হচ্ছেন। এ অবস্থা চলছে তাদের প্রায় ৮/৯ বছর। তারা একাধিকবার জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস পেয়েছেন ব্রিজ নির্মাণের। কিন্তু এলাকাবাসি জানিয়েছেন সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি আজও। হরহামেশাই ঘটছে দূর্ঘটনা। এলাকাবাসি অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের দুর্গতির কথা। বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও পাননি কোন প্রতিকার।

জানা গেছে, ওই এলাকার সকলেই প্রায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে বসবাস। গ্রামের শতকরা ৯৫ ভাগ লোক কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করে। অর্থ সামাজিক উন্নয়নে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্রিজটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ২০১৬ সালে তিস্তা নদীর আকস্মিক বন্যায় আয়শা মেম্বারের বাড়ি হতে খাড়াপাড়া সড়কটি ভেঙ্গে যায়। আর জনদুর্ভাগ্যে পড়ে ওই এলাকার মানুষজন। তখন থেকে নানা প্রতিকূলতার মাঝে ফসল উৎপাদন করলেও যাতায়াত ও পরিবহনের অসুবিধায় ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না এই এলাকার কৃষকেরা। এতে কৃষকদের বছরের পর বছর মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

জানা গেছে, বিগত দিনের নির্বাচনগুলোতে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হন। তবে আজ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেননি কোন জনপ্রতিনিধি। উপজেলা সদর, ইউনিয়ন পরিষদ, হাট-বাজারসহ জেলার সংযোগের পথ সড়কের এই ব্রিজ। সড়কে এই ব্রিজ হলে এলাকার মানুষ এটি ব্যবহার করে খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন যেকোনো জায়গায়। চলবে যানবাহন। ঘটবে অর্থ সামাজিক উন্নয়ন। নিশ্চিত হবে ওই এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বাজারদর।

 এলাকার স্থানীয় ব্যক্তি আলী আজগর বলেন, প্রতিদিন ওই সড়ক দিয়ে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ২, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডের আশ্রয়ন প্রকল্পের গ্রাম, খাড়াপাড়া ও  ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামসহ আশপাশের এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীসহ কমপক্ষে হাজারো মানুষজন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। বর্ষা মৌসুমে তিস্তার বন্যায় এই অঞ্চলে পলি পরে  জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ। ধান, গম, ভুট্টা, মরিচ, বাদাম, মিষ্টি আলু, গাজর, পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি কৃষিপন্য উজাড় করে দেয় প্রকৃতি। সড়কে একটি ব্রিজের অভাবে বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত তারা। আরো জানান, বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হন তা নয়, বর্ষা মৌসুমে শিশুদের এই ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের পুলের ওপর দিয়ে স্কুলে পাঠাতে ভয় হয়। তারা পানিতে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

একই এলাকার পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইমন ও সাব্বিরসহ আরো একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, বিশেষ করে বর্ষা মাসে বন্যার সময় আমাদের বিদ্যালয় যেতে অনেক সমস্যা হয়। আমরা অনেক ঝুকি নিয়ে সাঁকো পাড় হয়ে বিদ্যালয়ে যাই। সড়কের ওই ভাঙ্গা জায়গায় একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানাচ্ছি। 

ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে কোন রকম এই খাল পারাপার হলেও বর্ষাকালে জলে ভরে থাকায় বন্যার স্রোতে কাঠের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে এখানে।

স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত বছর আমার ছেলে সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়। আমরা অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করি। কৃষকদের যত মালামাল এই ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতে হয়।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা কেউ শোনে না। বর্ষার সময় সাঁকোটি পাড় হওয়া অনেক কষ্টকর। ওই সময় এই খাল পানিতে টই টম্বুর হয়ে থাকে। থাকে অনেক স্রোত। তখন সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে যায়। আমাদের কষ্ট কেউ বুঝে না। ৮ বছর থেকে শুনছি এখানে একটি ব্রিজ হবে। এখনো হলো না! আর হবে কি না, সেটাও জানি না! 

স্থানীয় বাসিন্দ পলাশ মন্ডল বলেন, এখানে আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমরা নিরুপায়, বৃহৎ একটি এলাকা আজ অবরুদ্ধ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সার্বিক উন্নয়ন থেকে আমরা বঞ্চিত। আমরা এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। 

পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, তিস্তা বেষ্টিত নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত এই এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, দরিদ্র কৃষক ও হাজারো পথচারীর  যাতায়াতের সুবিধার্থে এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুরোধ করে লাভ হয়নি।

ডিমলা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. সফিউল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আগামীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাসেল মিয়া বলেন, আয়শা মেম্বারের বাড়ি থেকে খাড়াপাড়া সড়কের খালের উপর ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে একটা ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে খুব শিগগির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন

আরো খবর দেখুন
© All rights reserved © Daily Bogra Times/2025
Theme Customized BY LatestNews