নীলফামারীর ডিমলায় ধান, সোনালী আঁশ পাট, ভুট্টা, পেঁয়াজ গমসহ রবি শস্যের প্রচুর উৎপাদন শক্তি সম্পন্ন তিন ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। আর এসব মাটি কন্টাক্ট নিচ্ছেন টলীর মালিক। তারা আবার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন বিভিন্ন স্থাপনাসহ অনেকের বাড়ির ভিটা তৈরির কাজে। এতে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমতে শুরু করেছে কৃষিজমি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতার কারণে ভূমি আইন অমান্য করে অবাধে তিন ফসলি উর্বর কৃষি জমির মাটি বিক্রি করেই চলছে অসাধু মাটিখেকো একটি চক্র। এ যেন দেখার কেউ নেই!
অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রটির মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অর্থের বিনিময় ম্যানেজ করে তিন ফসলি উর্বর জমি ধ্বংস করে মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে মাটিখেকো এই চক্রটি। চক্রটির উৎপীড়নে দিশাহারা হয়ে পড়েছে ফসলি জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা। তবে মাটিখেকো এই চক্রটির কু-পরামর্শ কোন কোন জমির মালিক জমিতে ফসল ফলানোর চেয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষে বেশি লাভের আশায় পুকুর খনন করছেন।
শনিবার (১৮জানুয়ারি) সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর তিতপাড়া (খালুয়া পাড়া) গ্রামে শুটিবাড়ি-ডিমলা হাসপাতাল সড়কের বোরহানের বাড়ির পাশে মাঠের ভিতর তিন ফসলি জমির উর্বর মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে অবৈধ ট্রলিতে করে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রায় দুই বিঘা আবাদি জমি থেকে একটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে আর ৫-৬টি অবৈধ ট্রলি গাড়িতে করে তোলা মাটি নেওয়া হচ্ছে। ওই জমির চারপাশে বিভিন্ন ফসলের চারাগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। মাটিখেকোদের কৃষিজমি ধ্বংসের লিলা দেখে যেন ওই ফসলের চারাগুলো কাঁদছে। আর সৃষ্টিকর্তার নিকট বিচার দিচ্ছে।
ট্রলির ড্রাইভাররা জানান, জমির মালিক (খালুয়া পাড়া) গ্রামের আইনুল হক। তিনি এসব মাটি বিভিন্ন স্থাপনা ও গৃস্থদের কাছে বিক্রি করছেন। আমরা শুধু মাটি কেটে গন্তব্যে পৌছে দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।
এ বিষয় জমির মালিক আইনুল হকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা মাছের খামার করি, তাই পুকুর কাটছি। মাটিগুলো এমনি এমনি নিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি কাটায় আমাদের কেউ বাধা দেয়নি। পুকুর কাঁটার অনুমতি আছে কিনা? জানতে চাইলে বলেন পুকুর কাঁটতে আবার অনুমতি, কিসের অনুমতি!
অপরদিকে একই এলাকার উত্তর তিতপাড়া (চাঙ্গাইবেচাটারী) গ্রামে তিন ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি করছেন মতিউর রহমানের ছেলে তফিজুল ইসলাম।
তিনি জানান, আমাদের জমির মাটি আমরা বিক্রি করতেই পারি। পুকুর খনন করে মাছ ছাড়বো। ফসলের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি। তাই পুকুর বানাচ্ছি। অতিরিক্ত ২/১ টলি মাটি কারো প্রয়োজনে লাগলে নিয়ে যাচ্ছে। পুকুর খননে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটছি অনেকদিন ধরে কেউ তো আমাদের বাধা দিচ্ছে না।
এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর দাবী, মাছ চাষের কথা বলে পুকুর খনন করে বিঘার পর বিঘা আবাদি কৃষিজমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছে মাটি বিক্রেতারা। এসব মাটি অবৈধ টুলিতে করে নেওয়া-আনার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাচাপাঁকা সড়কের বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
শুটিবাড়ি-ডিমলা সড়কের অটোচালক ফরহাদ হোসেন, মোজাম্মেল হক, আতোয়ার রহমান, মাইনুদ্দিন ও ভ্যানচালক মতিউর রহমান বলেন, সড়ক যতই মেরামত করুন, তাতে লাভ নেই। অবৈধ ট্রলি দিয়ে মাটি নেওয়া-আনা বন্ধ করা না হলে সড়কের বেহাল অবস্থা ভালো হবে না। তবে মাটিখেকো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে জানা যায়, ফসল উৎপাদনের জন্য যে জৈব পদার্থ দরকার তা সাধারণত মাটির উপর থেকে আট ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত থাকে। মাটির উপরিভাগ কেটে নিলে জমির উর্বরতা শক্তি হারায়। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন জমি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই জমিতে ভালো ফসল পেতে হলে জমির উপরিভাগের মাটি কোনো মতেই কেটে নেয়া যাবে না।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া বলেন, যেখানেই ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হবে, সেখানেই অভিযান চালানো হবে। খোঁজ-খবর নিয়ে সব জায়গায় মাটি কাটা বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।