1. dailybogratimes@gmail.com : admin :
তিস্তা মহাপরিকল্পনাঃ আশার সূর্য কি উদয় হবে? - Daily Bogra Times
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
শ্রেণীকক্ষে ছিল না শিক্ষকের চেয়ার-ফ্যান, শিক্ষার্থীদের রোরখা-হিজাবে আপত্তি প্রধান শিক্ষকের সুন্দরগঞ্জে স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সাঁকো নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ৪ বার সময় বাড়িয়েও ৬ বছরে শেষ হয়নি সোনাহাট সেতুর নির্মাণ কাজ, চরম ভোগান্তিতে স্থানীয়রা জয়পুরহাটে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে- জামায়াতে ইসলামী মানবিক ও দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়- ডাঃ শফিকুর রহমান রংপুর প্রেসক্লাবের কমিটি বিলুপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রশাসক নিয়োগ   ছাত্রদের দল গঠন নিয়ে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে যা বললেন ড. ইউনূস ভূরুঙ্গামারীতে দাড়িয়ে থাকা বাসে আগুন সবকটি আসন পুড়ে ছাই সিরাজগঞ্জে কৃষক সার ডিলার ও বিএফএদের সাথে মতবিনিময় তারেক রহমানের নির্দেশ শীতে দরিদ্র মানুষের পাশেদাঁড়াতে হবে-ভিপি সাইফুল ইসলাম পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিদেশ পালাতে গিয়ে বিমানবন্দরে গ্রেফতার

তিস্তা মহাপরিকল্পনাঃ আশার সূর্য কি উদয় হবে?

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী) ঃ-
  • আপডেট সময়ঃ শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৫৬ Time View
ভারতের পানি প্রত্যাহার, কৃষিতে বিপর্যয়ের শঙ্কা
print news

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী): তিস্তা মহাপরিকল্পনা রংপুর অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন বহন করে, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক টানাপড়েনে জর্জরিত হয়ে আছে এই পরিকল্পনা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই মুহূর্তে কোনো তৎপরতা নেই ।

চীনের হোয়াংহো নদী, একসময় ছিল ভয়াবহ বন্যার কারণে চীনের দুঃখের কারণ। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহারা হতো, গ্রামগঞ্জ ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু পরিস্থিতি এখন পাল্টে গেছে। নদীশাসনের মাধ্যমে হোয়াংহোকে মানুষের বন্ধুতে পরিণত করা হয়েছে। এই সাফল্যের অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশেও একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বার বার শুনালেও আটকে আছে পরিকল্পনাতেই। 

উত্তরাঞ্চলের পাগলা নদী নামে পরিচিত তিস্তা নদী। তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের দুর্ভোগের অবসান হবে এবং অঞ্চলটির উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই আশায় তিস্তা পারের ৫ জেলার লাখো পরিবার।  

২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে এই মহাপরিকল্পনার যাত্রা শুরু হয়। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় সজ্জিত শহর গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিলো।

পরবর্তী ২০২২ সালে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্ট এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের সেতু পরিদর্শন করে তিস্তা পাড়ের মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিলেন। তাঁর এই পরিদর্শনকে তিস্তা মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা হয়েছিল। তিস্তা পাড়ের মানুষ ভেবেছিলেন, এবার তাদের দীর্ঘদিনের দুঃখের অবসান হবে। কিন্তু তাঁর পরিদর্শন ও পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে তিস্তা পাড়ের মানুষ আবারও নিরাশায় নিমজ্জিত হয়েছে।

ভারত ও চীন দুই দেশই এই প্রকল্পে নিজেদের জড়িত করার জন্য আগ্রহী। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের অর্থায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে চীনের এই প্রকল্পে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় রংপুর অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। নদী ভাঙন, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

প্রশ্ন উঠছে, এই প্রকল্পটি কবে বাস্তবায়িত হবে? রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে গিয়ে জনগণের কল্যাণে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা কি সরকারের পক্ষে সম্ভব?

উত্তর অঞ্চলের মানুষ তিস্তা নদীকে এখন মৌসুমী  নদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। শুষ্ক মৌসুম নদী একেবারে শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যায় আর বর্ষাকালে শুধু পানি আর পানি ফলে হয় বন্যা-নদী ভাঙ্গন। এবং তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় প্রত্যেক বছর ড্রেজিং এর নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে। 

তথ্য মতে, প্রতিবছরে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে রংপুর বিভাগের ২ কোটি মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে। ভাঙনের কবলে পড়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার অমূল্য সম্পদ, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা উত্তরবঙ্গের ভাগ্য পরিবর্তনের অন্যতম উপায়। উত্তরবঙ্গের তিস্তা পাড়ের মানুষ বছরের পর বছর ধরে বন্যা ও নদীভাঙনের শিকার। কৃষি ও জীবিকার ক্ষেত্রে তারা নানান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই সমস্যা সমাধানে “তিস্তা মহাপরিকল্পনা” বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তিস্তার পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা, আধুনিক কৃষি ও মৎস্যচাষের সুযোগ, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, সেচব্যবস্থা উন্নত হবে, আর তিস্তা পাড়ের মানুষের জীবনে আসবে আশার নতুন আলো।

উত্তরের জেলা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং রংপুরের গঙ্গাচড়া তিস্তার বিধৌত অঞ্চল, তবে নেই কোন ভারী শিল্প কারখানা ফলে বছরের দুইটা চাষাবাদ বাদে সারা বছর কর্মহীন হয়ে পরে সাধারণ মানুষ, পারিবারিক চাহিদা, ভরণপোষণ মেটাতে যেতে হয় ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, এর ফলে পুরুষ শুন্য থাকে অধিকাংশ গ্রাম অঞ্চল। 

ডিমলা উপজেলা, টেপাখড়িবাড়ি বাড়ি বাসিন্দা রশিদ বলেন, তিস্তা প্রকল্পের আশায় আছি, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে জীবনটা ম্যাজিক এর মত ঘুরে যাবে, পরবর্তী প্রজন্ম জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারবে। 

কিসামত চরের কৃষক রশিদুল ইসলাম  বলেন, অনেক দিন থেকেই শুনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা,  কিন্তু কিছুই তো হয় না, প্রতি বছর নদী ভাঙ্গন এর কারনে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছি, বাইরে কাজে যাই, পরিবারের সাথে থাকতে পারি না। সরকারের প্রতি অনুরোধ আমাদের জন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুক।

তিস্তা বাচাও নদী বাচাও সংগ্রাম পরিষদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুধু তিস্তার ভাঙন কবলিত মানুষের দাবি নয়, এটি রংপুর বিভাগের গণমানুষের একটি দাবি। তিনি বলেন, “আমরা ভারত, চীন বুঝিনা, যেভাবেই হোক তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই। প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।” অবহেলিত রংপুরের মানুষ তাদের অর্থনৈতিক মুক্তি চায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

শেয়ার করুন

আরো খবর দেখুন
© All rights reserved © Daily Bogra Times/2025
Theme Customized BY LatestNews