দেশের বাজারে দুই মাসে দাম দ্বিগুণ বেড়ে পেঁয়াজের ঝাঁজ ঠেকেছে সেঞ্চুরিতে। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও, মূলত কৃষি বিভাগের গোঁজামিল তথ্যের কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না পণ্যটির।
কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টন। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ। হিসাব অনুযায়ী চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ৪ লাখ মেট্রিক টন বেশি। তবে গোঁজামেল দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, সঠিক পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয় ২৫- ৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৮-১০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। তাই এর আমদানি করতে হয় আরও ৭-৮ লাখ মেট্রিক টন। আজ পর্যন্ত কোন কৃষক অভিযোগ করেননি, তাদের জমির পেঁয়াজ বিক্রির আগেই নষ্ট হয়ে গেছে।
দেশের বাজারে আমদানি কম আর উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট থাকায়, বর্তমানে এর কেজি ঠেকেছে সেঞ্চুরির ঘরে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ফারুক নামের এক ক্রেতা জানান, ‘ব্যবসায়ীরা আজকাল ডাকাত হয়ে গেছে। এখন ধরেন পেঁয়াজের দাম বলছে ১০০ টাকা। আধা ঘন্টা পর এর দাম ৮০ টাকাও হতে পারে, আবার ১২০ টাকাও বিক্রি করতে পারে।’
তবে এ বাজারের একজন বিক্রেতা জানান, আলাদা করে কোনো মজুত করা পেঁয়াজ নেই কারো কাছে। গৃহস্থদের কাছে যা আছে, সেগুলোই ব্যবসায়ীদের কাছে আসতেছে। গৃহস্থরা এবার আস্তে আস্তে বাজারে পেঁয়াজ ছাড়তেছে। সব একবারে ছাড়েনি। তাই দাম উঠানামা করে।
উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে আমদানি ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন? জবাবে কৃষি বিপণন অধিদফতর বলছে, এ জন্য দেশে সাড়ে ৪শ’র বেশি মডেল ঘর তৈরি করা হয়েছে। তাতে পেঁয়াজ নষ্টের পরিমাণ কমবে আর সরবরাহ বাড়বে।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম বলেন, সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে একেকটা মডেল ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে কৃষকদের জন্য। এর ফলে পেঁয়াজের নষ্ট হওয়ার পরিমাণ অনেক কমেছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে এগুলোর সুফল মিলবে এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পেঁয়াজ রফতানি করা সম্ভব হবে।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হালি আর মুড়িকাটা এই দুবার উৎপাদনে না গিয়ে বছরব্যাপী উৎপাদন করার পরিকল্পনা করা উচিত। কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তাদের প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনা দিতে পারলে, গ্রীষ্মকালেও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত ১০ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। আর আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে শতকরা ৫০ ভাগ। ২০১১ -১২ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২০ লাখ মেট্রিক টন আর বর্তমানে হচ্ছে তার দ্বিগুন।