বগুড়ায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মাসাতের প্রতিবাদে হাসপাতালের সামনে আগুন জ্বালিয়ে ২ ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করেছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় বগুড়া-শেরপুর রোডের মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সামনে এই অবরোধ করেন তারা। এতে করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। ফলে দীর্ঘক্ষন ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. শাহিন আলম বলেন, ‘ বগুড়ার নার্সিং ও মিডওয়াইফারহ কলেজের ইনচার্জ আলেয়া খাতুন ও সহকারী কর্মকর্তা ফারহানার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে যেসকল শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জড়িত তাদের অপসারণ করে শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ফারহানা আক্তার এবং কলেজের বর্তমান ইনচার্জ, সাবেক ইনচার্জসহ কতিপয় কয়েকজন শিক্ষকরা প্রতি বছর ভর্তি বাবদ অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রতি বছর বিভিন্ন খাত দেখিয়ে যে টাকা নেয় তা তারা সকলে মিলে আত্মসাৎ করে। এদিকে সরকারি যে বাজেটগুলো আসে সেই বাজেটের টাকাগুলো প্রতিষ্ঠানটি পেয়ে থাকে তার হিসাব তারা শিক্ষার্থীদের দিতে পারেনি।’
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ‘জেলার ছাত্র কল্যাণ পরিষদ থেকে ইনচার্জের কাছে কলেজের মাসিক অধিবেশনে টাকার ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বাজেটের লক্ষ লক্ষ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ভর্তি বা অন্যান্য টাকা তারা দীর্ঘদিন ধরে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন বানচাল করতে বর্তমান ইনচার্জ আলেয়া খাতুন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন বলেও প্রমাণ মিলেছে। বর্তমানে কলেজের ইনচার্জ ও ৩য় শ্রেণির কর্মকর্তা ও মূলহোতা ফারহানা আক্তার পলাতক রয়েছে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষকের কাছে বিচার দিয়েছিলাম তিনিও বিষয়টি গুরুত্ব দেননি৷ এমনকি আমরা সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের বারাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা সুষ্ঠু সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করে যাবো। অতি দ্রুত এসব অনিয়ম দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তি না হলে আমরা আরো তুঙ্গে আন্দোলন গড়ে তুলবো।’
আন্দোলনের কারণে যানজটে আটকে থাকা মাহমুদুল নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। আমরা সাধারণ জনগণ তাদের আন্দোলনকে সমর্থণ জানায়। দ্রুত যেন তাদের দাবি মেনে নিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ‘
ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলন সফল করতে শিক্ষার্থীরা তাদের কৌশল অবলম্বন করছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা সড়কে দাঁড়িয়েছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন সফল হোক এটায় সবার চাওয়া। সড়ক ব্যবহারে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে এটা সকল জনগণকে মেতে নিতে হবে।’
এবিষয়ে কলেজের বর্তমান ইনচার্জ আলেয়া খাতুন ও সহকারী কর্মকর্তা ফারহানার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়। তাই তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সম্পর্কে জানতে চাইলে বগুড়ার নবাগত জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজাট বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নার্সিং সেক্টরের ডিজির নিকট পাঠানো হয়েছে। প্রশাসকের পক্ষ থেকে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। আশা করছি নার্সিং বিভাগের ডিজি দ্রুত বিষয়টি সমাধান করবে।’
এরআগে গত সপ্তাহ থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে এসব অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে বগুড়া নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করলে সড়কটিতে যানজট তৈরি হয়। জানতে পেরে দুপুর ১টায় জেলা সিভিল সার্জন মো. শফিউল আজম ও সেনা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের দ্রুত সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালে তারা সড়ক থেকে সরে দাঁড়ান।