বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) আগামী ২ এপ্রিল থেকে সারাদেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের আগাম সতর্কতা জারি করেছে। এই সময়ে রাজশাহী, রংপুর বিভাগসহ বেশিরভাগ এলাকায় তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলাকে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বিএমডি, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং আঞ্চলিক সমন্বিত বহুবিধ বিপদ আগাম সতর্কীকরণ সিস্টেম (রাইমস)।
বিএমডি জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিনে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে, যা ধানের ফসলের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। বর্তমানে ধান গাছের বৃদ্ধির পর্যায় ‘কাইচ থোড় থেকে শক্ত দানা’ অবস্থায় রয়েছে, যা তাপপ্রবাহের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল।
তীব্র গরমে ধান ফসলের ক্ষতি রোধে কৃষকদের জন্য বিশেষ পরামর্শ দিয়েছে ব্রি’র এগ্রোমেট ল্যাব। ধানের বৃদ্ধির এই পর্যায়ে (কাইচ থোড় থেকে শক্ত দানা অবস্থা) জমিতে সবসময় ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পানির ঘাটতি এড়াতে কৃষকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া, শীষ ব্লাস্ট রোগের ঝুঁকি এড়াতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ট্রুপার (৮ গ্রাম/১০ লিটার পানি) বা নেটিভো (৬ গ্রাম/১০ লিটার পানি) বিকালবেলা ৫ দিনের ব্যবধানে দুইবার স্প্রে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শেরপুরের কৃষক আলামিন জানান, “পানি ধরে রাখার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু আমাদের এলাকায় নদী থেকে পানি আনার ব্যবস্থা কম। গরমে শীষ পুড়ে যাওয়ার ভয় আছে। ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ ভালো, তবে দাম একটু বেশি।”
অন্যদিকে, বগুড়ার কৃষক সেলিম মিয়া আশাবাদী। তিনি বলেন, “আগাম সতর্কতা পেয়ে আমরা জমিতে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। ওষুধের ব্যবহার নিয়ে কৃষি অফিসারের সঙ্গে কথা বলব। আশা করি ফসল বাঁচাতে পারব।সরকারের পক্ষ থেকে সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ জরুরি।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে তাপপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ধান ফসলকে অনেকাংশে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
শেরপুর উপজেলার কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাসুদ আলম জানান, আমরা কৃষকদের জমিতে পানি ধরে রাখতে এবং শীষ ব্লাস্ট রোগের প্রতিরোধে ওষুধ স্প্রে করতে উৎসাহিত করছি। ইতোমধ্যে আমাদের টিম গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে। সেচের পানি সরবরাহের ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কৃষকরা যদি এখন সঠিক পদক্ষেপ নেন, তাহলে ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
শেরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার জানান, তাপপ্রবাহ থেকে ধানের ফলনের ক্ষতি মোকাবেলায় কৃষকদের আগাম সতর্ক করতে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকরতাদের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারনা অব্যহত আছে।